আমাদের সামগ্রিক অবস্থাটা যে ভালো নেই, সেটা মোটেও অস্পষ্ট নয়। যেদিকে তাকাই দেখি, ঝুঁকি ওত পেতে আছে। জরিপ বলছে, বাংলাদেশের শতকরা ৯৭ জন মানুষই এখন কোনো না কোনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ কী? উন্নতি তো হচ্ছে—জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, উদ্ভাবনায়, চিকিৎসায় বিশ্ব অনবরত এগোচ্ছে। আমরাও পিছিয়ে নেই। আমাদের জন্য বিদ্যুৎ ক্রমেই দুর্মূল্য হচ্ছে বটে, কিন্তু তবু তো আমরাও ডিজিটাল হয়েছি। অ্যানালগে নেই। আমাদের দেশেও রোবট এসেছে। মাশ আল্লাহ্ আরও আসবে। এমনকি সব ধরনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে পারমাণবিক যুগেও সসম্মানে প্রবেশ করে ফেলেছি। তাহলে অসুবিধাটা কোথায়? অসুবিধার কারণই-বা কী? কারণটা না বুঝলে করণীয় কী, তা ঠিক করা যাবে না।
অনেকে আছেন যাঁরা একেবারেই নিশ্চিত যে কারণটা হচ্ছে আমাদের নৈতিক অবক্ষয়। তাঁদের ভ্রান্ত বলা যাবে না। কিন্তু নৈতিকতা জিনিসটা তো আকাশে থাকে না, মনের ভেতরেই সে থাকে। এটা যখন মেনে নিই, তখন এটাও তো কোনোমতেই অস্বীকার করতে পারি না যে মন চলে বস্তুর শাসনে। গল্প আছে দুজন ভিক্ষুক কথা বলছিল নিজেদের মধ্যে। একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করেছে, তুই যে লটারির টিকিট কিনলি, টাকা পেলে কী করবি? টিকিট কেনা ভিক্ষুকটি বলেছে, টাকা পেলে সে একটা গাড়ি কিনবে। পরের প্রশ্ন, গাড়ি দিয়ে কী করবি? ভিক্ষুক বলেছে, ‘গাড়িতে চড়ে ভিক্ষা করব, হেঁটে হেঁটে ভিক্ষা করতে ভারি কষ্ট।’
ভিক্ষুকেরও মন আছে, কিন্তু সেই মন ভিক্ষাতেই আটকে গেছে, তার বাইরে যেতে পারেনি। পারবেও না। জীবন যার অনাহারে কাটে, স্বর্গে গিয়ে সে কোন সুখের কল্পনা করবে, পোলাও-কোরমা খাওয়ার বাইরে? কিন্তু বড়লোকের স্বর্গ তো ভিন্ন ধরনের। কোটিপতির ছেলে জন্মের পর থেকেই গাড়িতে চড়ে বেড়ায়; জন্মের আগে থেকেই চড়ে। তার স্বপ্ন তো গাড়িতে চড়ে ভিক্ষা করার নয়, তার স্বপ্ন গাড়িতে চড়ে এয়ারপোর্টে যাওয়ার। এয়ারপোর্ট হয়ে আমেরিকায় উড়ে যাওয়ার। ভিক্ষুক ও কোটিপতি একই দেশে জন্মগ্রহণ করেছে, একই সময়েরই মানুষ তারা; কিন্তু তারা কে কোথায়? আকাশ-পাতাল ব্যবধান।