বিয়ের পর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কি অপরাধ? বিয়ের পর অন্তঃসত্ত্বা হওয়াও কি অপরাধ? নাকি এটা আইন বহির্ভূত কোনো কাজ? যদি অপরাধ না হয়, তাহলে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকা নিষিদ্ধ হবে কেন? সন্তানধারণ ও বিয়ে একজন নারীর প্রজনন অধিকার। এই অধিকার নারীর এমন শক্তি, যে শক্তি দিয়ে জগৎ জয় করা যায়। বিয়ে হলে একজন নারী মা হতেই পারেন। মাতৃত্ব কোনো লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। মা এবং তার সন্তান সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পত্তি। এদের দুজনকে সুস্থভাবে রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কেন গর্ভবতী মাকে হলে থাকতে দেবে না? কোন আইনে মায়ের এই অধিকার ক্ষুণ্ণ করছেন তারা?
অথচ নিজেরা দিব্যি হলের প্রভোস্ট ও হাউস টিউটর হয়ে হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করছেন। একজন বিবাহিত ছাত্রীর যদি হলে থাকা অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে হলের হাউস টিউটর ও প্রভোস্টরা বিবাহিত হয়ে হলের আবাসিক ভবনে স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকছেন? নিয়ম অনুযায়ী তাদেরও অবিবাহিত হওয়ার কথা। প্রসঙ্গটি খুবই যৌক্তিক।
আমরা কি দিনে দিনে অগ্রসর হচ্ছি নাকি পিছিয়ে পড়ছি? চিন্তা-চেতনায় এই বৈকল্য কেন? নানান কারণে একটি মেয়ের পড়াশোনা করার সময় বিয়ে হতে পারে। মেয়েটির পরিবার বা স্বামীর পরিবার বা ঘনিষ্ট স্বজন কেউ ঢাকা বা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়টি যে শহরে অবস্থিত, সেখানে নাও থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে সেই ছাত্রী কোথায় থেকে তার পড়াশোনা শেষ করবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার যে বিধি-নিষেধ এবং প্রচলিত নিয়ম তা নিয়ে নতুন করে হৈ চৈ শুরু হওয়াতে সবার সামনে আবার এই আজব নিয়মটি উঠে এলো।
ছাত্রীর বিবাহিত হওয়ার সঙ্গে, তার হলে থাকা বা না থাকার কোনো সম্পর্ক বা যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। একজন ছাত্রী বিবাহিত না অবিবাহিত, তা দেখে কেন হলে সিট বরাদ্দ দেয়া হবে? হলেতো মেধা অনুযায়ী বৈধ সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। আবাসিক হলে সিট পাওয়া ছাত্র বা ছাত্রীর অধিকার। এটা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দয়ার বিষয় নয়। কাজেই বলা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি বিবাহিত ছাত্রীদের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।