জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বতন্ত্র সমাজতান্ত্রিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে শোষণ-বঞ্চনাহীন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বনির্ভর সোনার বাংলা গঠন করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র অন্যান্য দেশের সমাজতন্ত্র থেকে পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। সমাজতন্ত্রকে তিনি কোনো তাত্ত্বিক ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি, বরং তিনি চেয়েছিলেন একটি অর্থনৈতিক দর্শন, যেটি সামাজিক বাস্তবতা ও পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি সমাজব্যবস্থা, যাতে কৃষকের কল্যাণ হবে, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সুযোগের সমতা থাকবে, যেখানে জমিদারি ও সামন্তীয় শোষণ প্রথার অস্তিত্ব থাকবে না এবং গরিব মেহনতি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
বঙ্গবন্ধু তাঁর উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক দর্শনকে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাননি। তবে তাঁর সুযোগ্যা কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর পিতার দর্শন বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন এবং তাঁর অভিজ্ঞতা জারিত নিজস্ব অর্থনৈতিক দর্শন বাস্তবায়ন করছেন। এটি অনস্বীকার্য যে শেখ হাসিনা তাঁর পিতার দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। তবে এর পরও তাঁর অর্থনৈতিক দর্শনের সামগ্রিতা নিয়ে স্বকীয়তা স্পষ্ট।
শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক দর্শনের মূল উপজীব্য হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন মানে হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়া, বিশেষ করে যারা ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যারা বরাবর উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত থাকে। কিন্তু এর প্রাথমিক শর্ত হলো অর্থনৈতিক রূপান্তর। এই রূপান্তরের অনেকগুলো উপাদান রয়েছে।