সমস্যার সমাধানের প্রথম শর্ত সমস্যা স্বীকার করা। তা না করে সমস্যা শুধু অস্বীকারই নয় বরং ‘নো প্রবলেম, নো টেনশন, নাথিং, মাথা ঘামানোর কিছু নেই’ ধরনের ডেমকেয়ার বা কুছপরোয়া নেই বচন শুনিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা চলেছে। অবস্থা বেগতিক হয়ে পড়লে মাঝেমধ্যে বলা হয়েছে জিরো টলারেন্স আর চ্যালেঞ্জের কথা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সে যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না কিসিমের মুখস্থ প্যাঁচালও শুনতে হয়েছে। পাশাপাশি এমন সব যুক্তি, আলাপ দিয়ে সমস্যাকে আড়াল করা হয়, যে পাবলিকের মাথা কুটে মরার জোগাড় এসব শুনে।
আবার মাঝে-মধ্যে ঘটনা যা ঘটার সেটা ঘটে যাওয়ার পর শোনা যায় সাধুবচন। যেমন, আলুবাজদের টিকিটিও ছিঁড়তে না পেরে বলছেন সিন্ডিকেট করে কোল্ড স্টোরেজগুলো জনগণের টাকা শুষে নিয়েছে। কিচ্ছু করতে পারিনি। অথচ সমস্যার শুরুতে বলা হয়েছিল, এটি কোনো বিষয় নয়। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, বর্ডার খুলে দিলে একদিনে আলুর কেজি ২০ টাকায় নেমে যাবে। কীসের সঙ্গে কী? আলুর সঙ্গে পদ্মা সেতুর কোনো সম্পর্ক ছিল বা আছে? অথবা থাকবে কখনো? আলু, পেঁয়াজ, লতি, শুঁটকিসহ যাবতীয় নিত্যপণের দাম আকাশ ছুঁয়ে যাওয়াও এখানে নাথিং। কোনো সমস্যাই নয়। ভাতের বিকল্প রুটি, বেগুনের বদলে পেঁপে, শুকনা মরিচের বদলে মৌসুমে কাঁচামরিচ ড্রাই করে রাখার মতো কত বিকল্প বাতলে দেওয়া হচ্ছে। এখন আর আলুর বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও নো-চিন্তার এলান বাজানো হচ্ছে সমানে। বলে দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশের অবস্থা বিশ্বের বহু দেশের চেয়ে যথেষ্ট ভালো। বলতে বলতে, ‘বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে’ বলে দিতেও মুখে আটকায় না। এই বেহেশতখানায় অপমৃত্যুও মাথা ঘামানোর বিষয় নয়। তা সড়ক দুর্ঘটনায় হোক আর পানিতে ডুবে মরেই হোক। এই রাজধানীতে বৃষ্টির জলাবদ্ধতায় বিদ্যুতের পড়ে থাকা তারে স্পৃষ্ট হয়ে মরার ঘটনাও নাথিং। মাথা ঘামানোর বিষয় নয়। কেউ দায়ীও নয়। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো ঘটনা একটু বেগতিক হয়ে গেলে কিছুটা স্বীকার করে দোষ নিয়ে ফেলা হচ্ছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ঘাড়ে। বিশ্ব পরিস্থিতির ওপর। কখনো কখনো একটু সিরিয়াস ভাব আনতে মুখস্থ কিছু কথা আছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এ ধরনের লোক হাসানোর মাধ্যমে কষ্টভোগী মানুষের সঙ্গে মস্করার মশাইরা এখনো হাল ছাড়েননি। সামনে সাংবাদিক বা মাইক্রোফোন পেলেই একটা কিছু বলে দিয়ে বেটা সাজছেন, সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন। দিন শেষে তাদের কিন্তু কোনো দায় নিতে হয় না। যত দোষ সরকার, আওয়ামী লীগ আর বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর। বরাবরই স্পষ্ট এবং সোজাসাপ্টা কথায় অভ্যস্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা কখনো প্রতিপক্ষের কাছে রাজনীতির খোরাক হয়। ট্রলের আইটেম হয়। মাঝেমধ্যে যে তিনি কিছু কঠিন বার্তা দেন তখন সেদিকে কান-মন কোনোটাই যায় না। কথার মানে তো বোঝার চেষ্টাই করেন না। বড় জোর দাঁত কেলিয়ে হাসির ভান, মাথা নেড়ে ক্যামেরায় ফুটেজ হওয়ার বেত্তমিজি। নইলে মধ্যরাতের অন্ধকারে বাড়ি ফেরার পথে জিন-ভূতের ভয় তাড়াতে উচ্চৈঃস্বরে গীত বা জিকির গাওয়া। এই মান্যবরদের কি ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ের সাম্প্রতিক কয়েক লাইনের বক্তব্যটিতে একটু কান বা চোখ পাততে কি বেশি কষ্ট হবে?