গণতন্ত্র সম্পর্কে এত যে কথা বলা হয় তাতে ধারণা করা মোটেই অসংগত নয় যে, গণতন্ত্র জিনিসটা কী, সে বিষয়ে সবাই একমত। সেটা অবশ্য ঠিক নয়। গণতন্ত্র বলতে নানা মত আছে। কেউ ভাবেন গণতন্ত্র হচ্ছে নির্বাচিত সরকার। অন্যপক্ষ বলে মোটেই না, গণতন্ত্র অনেক বড় ব্যাপার। এ হচ্ছে একটা পরিপূর্ণ সংস্কৃতি। সংজ্ঞা নিয়ে মতবিরোধ যতই থাকুক, গণতন্ত্র যে পরিচিত শাসনব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম– এ নিয়ে তেমন একটা দ্বিমত নেই।
সর্বোত্তম কেন তাও আমরা জানি। কারণটা হচ্ছে এই যে, গণতন্ত্র ব্যক্তিকে মর্যাদা দেয়। কেবল মর্যাদা দেয় না, ব্যক্তির অধিকার, তার স্বার্থ, বিকাশ এসবকে বিবেচনার একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে। অন্য শাসনব্যবস্থায় এমনটা ঘটে না। সেখানে একনায়কত্ব, স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ইত্যাদি জিনিস নানা নামে কার্যকর থাকে। কয়েকজন শুধু স্বাধীনতা পায়, অন্য সকলের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, ক্ষমতা নাগরিকদের হাতে থাকে না, চলে যায় শাসকদের হাতে। ব্যক্তি ছোট ও কাবু হয়ে যায়।
ওদিকে আবার ব্যক্তির সাথে সমষ্টির সম্পর্ক নিয়েও সমস্যা আছে। যেখানে রাষ্ট্র থাকে, সেখানেই এই প্রশ্নটা থাকে। সমস্যাটা সমাজেও আছে এবং থাকে। আসলে সমাজ যেখানে রাষ্ট্রও তো সেখানেই। আর সমাজ আছে সবখানেই; মানুষ অরণ্য, দ্বীপ বা পাহাড়চূড়া, যেখানেই যাক না কেন সমাজের প্রয়োজনটা তার সঙ্গেই থাকে। সঙ্গ ছাড়ে না। সমাজ ছাড়া মানুষ বাঁচে না; সম্পর্কটা মাছ ও পানির মতো না হলেও কাছাকাছি বটে। ব্যক্তির সাথে সমষ্টির দ্বন্দ্বটাও খুবই স্বাভাবিক। আর এখানেই গণতন্ত্রের বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। গণতন্ত্র সকলের স্বার্থ দেখতে চায় এবং ব্যক্তির স্বার্থকে মেলাতে চায় সমষ্টির স্বার্থের সাথে। অর্থাৎ এমন একটা ব্যবস্থা চায়, যেখানে ক্ষমতা বিশেষ কোনো কেন্দ্রে কুক্ষিগত থাকবে না, ছড়িয়ে থাকবে সমাজের সর্বত্র; এবং রাষ্ট্র শাসন করবে জনপ্রতিনিধিরা। এখানেই নির্বাচনের ব্যাপারটা আসে। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয় যে অনেকে ধারণা করেন যে যেখানে নির্বাচিত সরকার আছে সেখানেই গণতন্ত্র রয়েছে।