বাংলাদেশে কোনো জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নেই। এই না থাকা অর্থনীতির দুর্বলতা ও অসংগঠিত অবস্থা, আর সেই সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বঞ্চনা নির্দেশ করে। বিভিন্ন খাত ধরে অবশ্য ন্যূনতম মজুরির বিধান আছে, কিন্তু সেটাও ঠিকমতো কার্যকর নয়। বাংলাদেশে বৃহত্তম রপ্তানিমুখী শিল্প খাত তৈরি পোশাক, সেখানেই ন্যূনতম মজুরির খুবই দীনদশা। প্রতিবার বহু রকম সভা–সমাবেশ–আন্দোলন ছাড়া মজুরি নিয়ে কোনো নড়াচড়া হয় না। কিছুদিন ধরে তৈরি পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন, দাবিদাওয়া চলছে। মজুরি বোর্ড গঠিত হয়েছে, কিন্তু এখনো অস্বচ্ছ, অনিশ্চিত পরিস্থিতি। অন্য খাতগুলোর অবস্থা চিন্তা করাও কঠিন।
২০১৮ সালে গার্মেন্টস খাতে যে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়, তা ছিল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দাবির ৫০ শতাংশ, মাত্র ৮ হাজার টাকা। মূল মজুরি বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা, আর এই বৃদ্ধির অজুহাতে মালিকদের নানাবিধ সুবিধা সে সময় আরও বাড়ানো হয়। আমার মনে আছে, সে সময় পোশাক কারখানার মালিকেরা ‘তৈরি পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি যতটুকু বাড়বে, সরকারের কাছ থেকে তার সমপরিমাণ সুবিধা’ দাবি করেন। সে জন্য তাঁরা সরকারের কাছে নতুন করে কর হ্রাস ও নগদ সহায়তার দাবি তোলেন। দাবি তুলে অপেক্ষা করতে হয়নি তাঁদের, শ্রমিকদের মতো মাসের পর মাস দেনদরবার, মিছিল–মিটিং করে হতাশও হতে হয়নি। যেদিন এই দাবি জানানো হয়, সেদিনই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এ দুই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি ছাড়াও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎসে কর কমিয়ে দেওয়া হয়, করপোরেট করও কমানো হয়।