ডালাসে বাংলাদেশের অনেক সফল তরুণ-তরুণীকে দেখেছি, যাঁরা এখান থেকে শিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন এবং পড়ালেখা শিখে বেশ সম্মানজনক চাকরিও করছেন। তাঁদের মধ্যে স্থপতি আছেন, চিকিৎসক আছেন, আইটি এক্সপার্ট আছেন। আবার আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় বহু ব্যর্থ মানুষকে দেখেছি, যাঁরা একটি স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকায় গিয়েছিলেন, কিন্তু সারা জীবন কোনো জীবিকায় স্থির হতে পারেননি; বরং একেবারে তাঁদের যোগ্যতার চেয়ে ছোট চাকরি করে জীবন পার করছেন, সম্ভবত তাঁদের সংখ্যাই বেশি। সৌভাগ্যের দ্বার তাঁদের জন্য কখনোই খোলেনি।
এক সন্ধ্যায় আমার ছেলের বাসায় বেশ আড্ডা জমে উঠেছিল, ঠিক আড্ডা নয়; সেটা ছিল কয়েকজন প্রবাসী তরুণের প্রাজ্ঞ সম্মিলনী। যে তরুণটি সম্মিলনী জমিয়ে রাখছিলেন এবং আমরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনছিলাম। তাঁরই এক বন্ধু হঠাৎ করে বলে উঠলেন, ‘দেখুন তো ওর পেছনে কী আছে?’ খুব একটা জোরাজুরি করতে হলো না। পেছন থেকে বের করে আনলেন একটি রিভলবার। আমরা সবাই একটু অবাক হলাম। এই শান্তিপ্রিয় তরুণটির সঙ্গে রিভলবার কেন? সে কি আত্মরক্ষার জন্য? নাকি মাঝে মাঝে তিনি কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত হন?
এ প্রসঙ্গ উঠতেই আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম! মনে পড়ল অনেকগুলো টিভি ফুটেজের কথা, যেখানে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা শপিং মল, স্কুল, চার্চ—এসব জায়গায় হামলা চালায়। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে ছাত্ররাই একজন শিক্ষককে গুলি করে মেরে ফেলেছিল। কিছুদিন আগেও টেক্সাসের কোনো একটি স্কুলে সশস্ত্র হামলায় বেশ কিছু শিশু নিহত ও আহত হয়েছিল। এরপর একটা জোর আওয়াজ উঠেছিল—অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রকাশ্যে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এই আওয়াজ আমেরিকার ইতিহাসে বহুবার উঠেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। একদিকে যারা অস্ত্র ব্যবসায়ী বা অস্ত্র কারখানার মালিক, তারা খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। আর অন্যদিকে আত্মরক্ষার অধিকারের জন্যও এই ব্যবস্থাকে চালু রাখার পক্ষে একটা বিরাট জনসমর্থন আছে।
একদা সম্ভবত বহু আগে একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, কখনো যদি স্বৈরাচারী একনায়কের আবির্ভাব হয়, তাকে উৎখাত করার জন্য অস্ত্র কেনা এবং সঙ্গে রাখার অধিকার থাকতে হবে। বারবার শান্তিকামী নাগরিকেরা এ কথাও বলে থাকে যে ইংল্যান্ডে পুলিশের হাতেও কোনো অস্ত্র থাকে না, কিন্তু সেই পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা যথাযথভাবেই দিয়ে থাকে।