দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ‘রসিদবিহীন কালোবাজার’ সৃষ্টির অভিযোগটি হালকাভাবে লওয়ার অবকাশ আছে বলিয়া আমরা মনে করি না। কারণ মঙ্গলবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, অভিযোগটি উঠিয়াছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক তথা স্থানীয় প্রশাসনের খোদ শীর্ষ ব্যক্তির পক্ষ হইতে। তিনি বলিয়াছেন, স্থলবন্দর দিয়া আমদানীকৃত শত শত টন পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে বিক্রি হইলেও পণ্যটির আমদানি বা ক্রয় সংক্রান্ত কোনো ‘ডকুমেন্ট’ বিক্রেতাদের নিকট পাওয়া যায় না। অথচ প্রয়োজনীয় রসিদ বা কাগজপত্র ব্যতীত কোনো বন্দর দিয়াই কোনো পণ্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ নাই। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট আমদানীকৃত পণ্য অবৈধ বলিয়া ঘোষিত হইতে পারে, যাহা প্রচলিত আইনে বাজেয়াপ্ত করিবার অধিকার সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার আছে। ইহা সত্য, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী কেহ কেহ পণ্য আমদানির সহিত যুক্ত থাকিলেও অনেকেই কমিশন এজেন্ট। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে তাহারা আমদানিকারকদের পণ্য আড়তে রাখিয়া বিক্রয় করেন। কিন্তু তাহারা চাহিলে আমদানিকারক পণ্য ক্রয়ের রসিদ সরবরাহ করিতে বাধ্য। ফলে সন্দেহের অবকাশ থাকাই স্বাভাবিক, অতিরিক্ত মুনাফার ভিত্তিতে পেঁয়াজ বিক্রয়ে শুধু আমদানিকাকারক নহে, খাতুনগঞ্জের সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাদেরও বৃহৎ কোনো স্বার্থ রহিয়াছে।
সরকারি নিয়ম অনুসারে বিক্রেতারা ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ করিলে বাজার নিয়ন্ত্রকদের পক্ষে পণ্যটির ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ সহজ হয়, যাহার সুফল ভোক্তা তো বটেই, বিক্রেতাও পান। এই প্রক্রিয়ায় কোনো পণ্যের মজুতদারিরও রাস টানিয়া ধরা যায়। ফলে বোধগম্য কারণেই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বাজার তদারককারীদের রসিদ না দেখাইবার কসরত চালান। তবে যাহা বোধগম্য নহে; পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের এহেন কারসাজি বোধে আসিবার পরও তদারককারী সংস্থাগুলি কঠোর হইতেছে না কেন?