এক সুউচ্চ আবাসিক ভবনের লিফটে খুব ভিড় হচ্ছিল। কর্তৃপক্ষ খেয়াল করল, সেখানে বসবাসকারী সবাই লিফটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এমনকি দোতলা বা তিনতলার লোকেরাও সেটা সবসময় ব্যবহার করছে। তাই সবাইকে সিঁড়ি ব্যবহারে উৎসাহ দিতে সচেতনতামূলক পোস্টার সাঁটানো হলো। সিঁড়ি ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। লিফট ব্যবহারে বিদ্যুৎ অপচয় হয়। কাজের ফাঁকে সিঁড়ি ব্যবহার শরীরচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে...এমন সুন্দর সুন্দর কথা লেখা হলো। তাতে কি লিফট ব্যবহারের প্রবণতা কমেছিল?
না, সবাই সেটা লক্ষ করেছে, ওই বিষয়ে পরস্পর কথাও বলেছে। কিন্তু আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তখন আবাসন কর্তৃপক্ষ লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য চায়। এমন সমস্যার কথা আরো কিছু ক্রেতা বলেছিল। তাই বিষয়টা নিয়ে তারা সিরিয়াস হয়। প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করে। কিন্তু তারা এর কোনো সমাধান দিতে পারে না। কারণ সমস্যাটি পণ্যের গুণগত মান বা সেবার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।
তখন তারা মানুষের আচরণ বিষয়ে গবেষণা করে এমন এক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য চায়, যারা ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শ দেয় লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াটি স্লো করার জন্য। আগের বেশকিছু রিসার্চের ভিত্তিতে সেটা নির্ধারণ করা হয় ১৬ সেকেন্ড। অর্থাৎ বাটন চাপার পরেও দরজাটি বন্ধ হতে বেশ সময় লাগে। এতে বিরক্ত হয়ে যারা কাছাকাছি ফ্লোরে যেতে চায় তারা সিঁড়ি ব্যবহার শুরু করে। অনেকে দৌড়ে লিফটের আগেই গন্তব্যে পৌঁছার জন্য গর্ববোধও করতে থাকে!
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কয়েক মাস পর লিফটের দরজা বন্ধের সময় আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেয়া হলেও কিছু মানুষ সিঁড়ি ব্যবহার অব্যাহত রাখে। তারা অন্যদেরও তেমনটা করতে উৎসাহ দেয়। কাছাকাছি লেভেলে হেঁটে ওঠানামা করা লোকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে! পাঠক এবার বলুন, মানুষের কোনো অভ্যাস বদলাতে কত সময় লাগে? স্থান-কাল-পাত্রভেদে অবশ্যই এর তারতম্য হয়। তবে এ গবেষণা বলছে, মাত্র ১৬ সেকেন্ডেও মানুষের একটা অভ্যাস বদলে ফেলা সম্ভব!
আমরা নিজেদের অসংখ্য অভ্যাস বদলাতে চাই। বিশেষত যেগুলো অন্যদের কাছে ‘বদভ্যাস’ বলে পরিচিত সেগুলো তো খুবই বদলাতে চাই। কারণ সেটা করা সম্ভব হলে আরো সাশ্রয়ী, উৎপাদনশীল ও গ্রহণযোগ্য মানুষ হওয়া সম্ভব। পাশাপাশি নিজের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। কিন্তু আমরা চাইলেও অভ্যাস বদলাতে পারি না কেন? অনেকে ভাবেন আন্তরিকভাবে চাই না বলেই সেটা হয় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো অনেকে সত্যি সত্যি চাওয়ার পরেও সেটা হয় না। কারণ তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলো কার্যকর পন্থায় ও আন্তরিকভাবে নিতে পারি না। পরিকল্পিতভাবে সেটা চেষ্টা করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব।