সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স সাধারণত ৫৯ বছর। কিন্তু পোশাককর্মীরা, বিশেষ করে নারী কর্মীরা ত্রিশের কোঠা পার হলেই চাকরি নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যান। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে না লাগিয়ে তখন তাঁদের বাদ দিয়ে কম বেতনে নবীন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।
অন্যান্য দিনের মতোই গত ২৭ জুন কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিলেন পেয়ারা বেগম। গাজীপুরের টিআরজেড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে তিনি জুনিয়র ফিনিশিং অপারেটর। পরদিন থেকে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে। বেলা ১১টার দিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাঁকে ডেকে পদত্যাগ করতে বললেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে তাঁর বয়স ৫০ বছর। পেয়ারা বেগমের পুরো পরিবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেল।
এই বছরেরই ২৮ জানুয়ারি গাজীপুরের আরেক পোশাক কারখানা লিজ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৫৩ বছর বয়সী কর্মী রওশন আরার চাকরি চলে যায়। তিনি সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন।
একই এলাকার তাজ নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে দুই বছর কাজ করার পর গত ১৫ মে ছাঁটাই হন ৪৮ বছর বয়সী ফায়েজা বেগম। তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ অপারেটর।
গত ২৭ ও ২৮ জুলাই এই তিন নারীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলো। কোনো পোশাক কারখানায় গেলে পেয়ারা, রওশন ও ফায়েজাদের বয়সী নারীদের উপস্থিতি বিরল। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, পোশাক কারখানায় নারীদের গড় বয়স ২৫ বছর। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীর হার ১০ শতাংশের বেশি নয়। অন্যান্য চাকরি থেকে অবসরের স্বাভাবিক বয়স যেখানে ৫৯ বছরের কম নয়, সেখানে পোশাক কারখানায় ৩৫-৪০ বছর বয়স মানেই ‘বুড়ো’ হয়ে যাওয়া। অথচ ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের (২০২২-২৩ অর্থবছর) রপ্তানি আয়ের এই খাতে অভিজ্ঞতার কোনো মূল্য নেই। কখনো তাঁদের চাকরি হারাতে হয়, কখনো চাকরি ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।