দেশের মূল্যস্ফীতি তাপমাত্রার মতো। কাগজে-কলমে যতটা, অনুভূত হয় আরও বেশি। গড় মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশ হলেও যাঁদের আয় সীমিত, তাঁদের কাছে মূল্যস্ফীতির হার হবে দ্বিগুণেরও বেশি। অথচ সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল তা ৬ শতাংশের নিচে রাখা হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই ব্যর্থতার দায়ভার সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপরেই বর্তায়। জবাবদিহি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই করতে হবে।
সরকার ও সাধারণ মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহির কিন্তু অসংখ্য উদাহরণ আছে। কেননা নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি একদিকে যেমন একটি সরকারকে অজনপ্রিয় করে, অন্যদিকে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ থাকে চরম কষ্টে। ফলে মানুষের জানার অধিকার আছে, কেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা গেল না? আর সাধারণ মানুষ যাতে জানতে পারে, সে কারণেই বিভিন্ন দেশ আইন করে সেই ব্যবস্থাও রেখেছে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জবাবদিহির একটা নির্দিষ্ট কাঠামো আছে। যেমন ভারতে আরবিআই অ্যাক্ট ৪৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক ইন্ডিয়া (আরবিআই) যদি পরপর তিন প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখিত প্রতিবেদন দিতে হয়। সেই প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কর্মপরিকল্পনা এবং কত দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তার সম্ভাব্য সময়সীমাও লিখে দিতে হয়। ব্যর্থ হওয়ার ঠিক এক মাসের মধ্যে আরবিআই গভর্নর এই চিঠি লিখতে বাধ্য।
একইভাবে জবাবদিহির অংশ হিসেবে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে না থাকলে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর মধ্যে খোলা চিঠি বিনিময় হতে হয়। সেই চিঠিতে গভর্নরকে জানাতে হয় কেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। একই সঙ্গে লক্ষ্য পূরণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা-ও বলতে হবে। এই চিঠি আবার গোপন করা যাবে না, ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
এমনকি ফিলিপাইনের মতো দেশেও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে দেশের প্রেসিডেন্ট ও দেশের মানুষের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখতে হয়, যা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। জ্যামাইকার গভর্নরকেও মুদ্রানীতি ঘোষণার আগেই দেশটির অর্থমন্ত্রীকে প্রস্তাবিত নীতির কথা জানিয়ে চিঠি লিখতে হয়। জ্যামাইকার আইনেই এই চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের কথা বলা আছে।