‘আগামী ডিসেম্বরে আমার মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে; তত দিন পর্যন্ত আমাকে থাকার সুযোগ দিন। তখন আমি নিজ থেকেই হল ছেড়ে দেব। আমার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।’ এভাবে অনুনয়-বিনয় করেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদের মন গলাতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী এনামুল হাসান নোমান। এই ছাত্রসংগঠনটির কর্মসূচিতে নিয়মিত হাজির না হওয়ার ‘অপরাধে’ নিজের থাকার জায়গা হারাতে হয়েছে নোমানকে। আর শুধু তিনি একাই নন, তার মতো ঢাবির বিভিন্ন আবাসিক হলের অনেক শিক্ষার্থীকে এমন পরিণতি ভোগ করতে হয় কিংবা বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে নির্বিকার ভূমিকা পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সিট থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় নোমানকে। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। বাধ্য হয়ে বর্তমানে আজিমপুর এলাকার একটি মেসে থাকছেন। তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হল প্রশাসন। সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে নোমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আর্থিক অবস্থার কথা জানিয়ে হল ছাত্রলীগ নেতাদের অনুরোধ করলে তারা আমাকে প্রথমে সিট ছাড়তে হবে, এরপর নিয়মিত প্রোগ্রাম করতে হবে (ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া), তারপর আমার জন্য একটা কিছু ব্যবস্থা করবেন বলে জানায়। পরে আমি বাধ্য হয়েই হল ছেড়ে দিই।’
ঢাবি শিক্ষার্থীদের জোর করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য করার ঘটনা প্রায় নিয়মিত ঘটছে। ছাত্র সমাবেশের আগে শিক্ষার্থীদের কক্ষে, রিডিং রুম এবং মেসেঞ্জার গ্রুপগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষ থেকে শতভাগ উপস্থিতির নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্যথায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়। মেসেঞ্জার গ্রুপে দেওয়া এমন নির্দেশনার বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশট এবং কথোপকথনের অডিও রেকর্ড দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। এর আগে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে অংশ নিতে বাধ্য করার স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়লে বেশ সমালোচনা তৈরি হয়। এ ছাড়া ছাত্রদল ‘দমনে’ হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে।