কথা বলা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলেন বৃদ্ধ রওশনজান। গত এক বছর ধরে প্রচুর কথা বলছেন। ৭২ বছর বয়সী রওশনজানের প্রায় দন্তবিহীন মুখের হাসিটি বেশ সুন্দর। গুছিয়ে কথা বলেন। বলতে আনন্দ পান। কিন্তু তাঁর কথা কেউ শোনে না।
প্রায় আট বছর কানে শোনেন না তিনি। এক নিঃশব্দ জগতে বসবাস তাঁর। ১৪ নম্বর ক্যাম্পের ডি ব্লকে চাচাতো বোনের ঘরের পাশে একটি ছাউনিতে একাই থাকেন। পা আর কোমরে ব্যথার কারণে খুব একটা নড়তেও পারেন না। বৃদ্ধ চাচাতো বোনের সহায়তায় টয়লেটে যাওয়া আর অজু-গোসলের কাজ সেরে নেন ঘরের পাশেই। বোন যা দেন, তা-ই খান। আপন মনে সারাদিন বিড়বিড় করেন। কারও কথা শোনেন না, কেউ কাছে আসে না। নিজের খুব বেশি প্রয়োজন নেই বলে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন।চারপাশের জগৎ থেকে এক প্রকার নির্বাসনে।
গত বছর রেড ক্রিসেন্ট থেকে কানে শোনার যন্ত্র দেওয়া হয় তাঁকে। অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে সেদিন। হঠাৎ তাঁর চারপাশের জগৎ শব্দময় হয়ে ওঠে। এমন যন্ত্র যে পৃথিবীতে আছে– সে ধারণাই ছিল না তাঁর।
এর পর থেকেই তাঁর কথা বলা শুরু। যাঁকে পান তাঁকে ধরেই সমানে কথা বলতে থাকেন। কথা বলায় যে এত আনন্দ– কোনোদিন বোঝেননি রওশনজান। অবশ্য তাঁর কথা কেউ শোনে না। শুনলেও আমলে নেয় না।
রওশনজান আক্ষেপ করেই বললেন, আমি না হয় বুড়া হয়ে গেছি। আজ বাদে কাল মরেই যাব। আমার কথা না শুনলেও ক্ষতি নাই। কিন্তু আমার চেয়েও খারাপ অবস্থা আমাদের গোটা কওমের। রোহিঙ্গাদের কথা কেউ শোনে না। শুনলেও আমলে নেয় না। আমাদের কী লাগবে, না লাগবে– সেটা তারাই ঠিক করে দেয়। আমাদের দেয়, আমরা নিই। না নিয়েও যে উপায় নেই।