ড. হুমায়ুন কবির। কানাডার থম্পসন রিভারস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম ধর্ম ও গণতন্ত্র, মুসলিম সমাজ, তাদের সংস্কৃতি ও রাজনীতি এবং মাদ্রাসাশিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশে এসব বিষয়ের প্রেক্ষাপট, অবস্থান ও প্রভাব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
নানা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ধর্মভিত্তিক একটি রাষ্ট্র থেকে আমরা একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করেছি। যার মূল ভিত্তির মধ্যে ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজে ধর্মভিত্তিক যে আত্মপরিচয় ছিল, তা কি সংকটে পড়েছে?
হুমায়ুন কবির: এখানে দেশ বিভাগসহ অনেক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। সেগুলোকে তিনটি প্রকরণে আমরা ভাগ করতে পারি—সংহতিমূলক বা ইন্টেগ্রেটিভ প্যারাডাইম, অসংহতিমূলক বা ডিজইন্টেগ্রেটিভ প্যারাডাইম ও আলংকারিক একীভবন বা রেটোরিকাল ফিউশন প্যারাডাইম।
সংহতিমূলক প্যারাডাইম মূলত পাকিস্তান রাষ্ট্রগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তখন মনে করা হয়েছিল, ব্রিটিশ উপনিবেশ ও হিন্দু আধিপত্যবাদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপমহাদেশের অঞ্চলগত ও ভাষাগত বিভক্ত মুসলমানদের একীভূত করার জন্য প্রধানতম উপায় হচ্ছে ধর্ম। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠনের পর অসংহতিমূলক প্যারাডাইম আমরা দেখি। যেখানে সাংস্কৃতিক দূরত্ব প্রধান হয়ে ওঠে, যা উৎসারিত হয় মূলত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনা থেকে। এর ফলে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে।
পাকিস্তানের সংবিধান রচনার সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতারা বলেছিলেন, ‘এ ধরনের ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে কি তোমরা আমাদের সাথে প্রতারণা করতে চাও?’ কিন্তু দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে থাকা এই প্যারাডাইমকে তখন সমাজের মানুষ কীভাবে দেখল? এখানে একটি শ্রেণির বিষয় আছে। জাতিরাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ ও আকাঙ্ক্ষা আসলে বাঙালি মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত ও শহুরে মানুষের মধ্যে শুরু হয়। ১৯৭০ সালের এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তখনো গ্রামের অনেক মানুষ নিজেদের পাকিস্তানি বলেই পরিচয় দিচ্ছে।