চট্টগ্রামে ঋণখেলাপিদের বড় একটি অংশ জাহাজ ভাঙা শিল্পসংশ্লিষ্ট। এসব ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের একাংশের বিরুদ্ধে এখন ঋণ পরিশোধ না করেই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে খেলাপ হওয়া ঋণ থেকে দায়মুক্তি ও নতুন ঋণ সুবিধা নেয়ার কৌশল গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ইয়ার্ড ভাড়া বা বিক্রি করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
২০১৪ সালেও চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা শিল্পে অনুমোদিত শিপইয়ার্ডের সংখ্যা ছিল ১৮৫। পরিবেশ অধিদপ্তরের চলতি বছরের ছাড়পত্র পাওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শিপইয়ার্ড আছে ১০৫টি। চলতি আগস্টে শুরু হয়ে এসব শিপইয়ার্ডের ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে। নতুন এ তালিকার ১০৫ শিপইয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি এরই মধ্যে ব্যবসায়িক নাম পরিবর্তন করেছে। এগুলোর মধ্যে আবার ১৭টি প্রতিষ্ঠান চালু আছে। কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে আটটির। পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ছয়-সাত বছরে নাম পরিবর্তন করা এসব শিপইয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণখেলাপি।
দেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় ২০০০ সালের পর। দ্রুত মুনাফার আশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তারাও এ খাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ব্যাংকগুলোও ঋণের প্রবাহ বাড়ায়। যদিও এক দশকের মধ্যেই শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের এসব উদ্যোক্তার বড় একটি অংশের কাছ থেকে পাওনা অর্থ তুলতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মূলত ২০১০ সাল-পরবর্তী মন্দায় জাহাজ ভাঙা শিল্পে বড় ধরনের লোকসান, ঋণ নিয়ে যথাযথ বিনিয়োগ না করে অর্থ লোপাট, অর্থ পাচার ও ভিন্ন খাতে বিনিয়োগের কারণে ইয়ার্ডগুলোর একটি বড় অংশই মুখ থুবড়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় দুই-তৃতীয়াংশ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। তবে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে ইস্পাত খাতের বৈশ্বিক ও স্থানীয় পর্যায়ের বাণিজ্য সাম্প্রতিক সময়ে চাঙ্গা হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতির সুবিধা নিতে নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন করে ব্যবসায় ঢুকতে চাইছে ঋণখেলাপি উদ্যোক্তাদের একাংশ। তাদের নাম পরিবর্তন করে সুবিধা আদায়ের প্রয়াস সফল হলে সামনের দিনগুলোয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় আরো কঠিন হয়ে পড়বে।