শরিয়তের দৃষ্টিতে ভুল একটি স্বাভাবিক বিষয়। এক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা হলো, একজন মুমিনের ভুল সংশোধন করে দেবে অপর একজন মুমিন, যা গুরুত্বের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামের বিধানে ভুল শোধরানোর নীতিমালা রয়েছে। এই নীতি অবলম্বন না করায় হিতে বিপরীত হয়। সম্পর্কে ফাটল ধরে, বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই, সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’ -সুরা আল হুজরাত : ১০
বর্ণিত আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ ভুল সংশোধন করে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক দৃঢ় করার উপায় বাতলে দিয়েছেন। নবী কারিম (সা.) ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে অনন্য নজির রেখে গেছেন। ভুল শোধরানোর ক্ষেত্রে কখনো তিনি প্রশ্ন করেছেন, আবার কখনো উপমা দ্বারা ভুল বুঝিয়ে দিয়েছেন, কখনো ইশারা-ইঙ্গিতে ভুলকারীকে সংশোধন করেছেন, আবার কখনো রাগও করেছেন। এভাবে তিনি ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে সংশোধন করেছেন।
অনেকেই ভুল শোধরাতে তিরস্কারের পথ অবলম্বন করেন। এটা কোনো কার্যকর পথ নয়, কারণ তিরস্কার কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। এ জন্য তিরস্কার পরিহার করে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেওয়াটাই অধিক শক্তিশালী ও কল্যাণকর। হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, এক যুবক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন। এটা শুনে লোকজন তার প্রতি উত্তেজিত হয়ে ধমক দিল এবং চুপ করতে বলল। তখন রাসুল (সা.) তাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, বসো। যুবকটি বসার পর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, তুমি কি এটা তোমার মায়ের জন্য পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তেমনি মানুষও তাদের মায়েদের জন্য সেটা পছন্দ করে না। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য তা পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, অনুরূপভাবে মানুষ তাদের মেয়েদের জন্য সেটা পছন্দ করে না। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য সেটা পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তদ্রƒপ লোকেরাও তাদের বোনের জন্য তা পছন্দ করে না। (এভাবে রাসুল (সা.) তার ফুফু, খালা সম্পর্কেও অনুরূপ কথা বলেন আর যুবকটি একই জবাব দিল)। এরপর রাসুল (সা.) তার বুকে হাত রেখে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তার গোনাহ ক্ষমা করে দিন, তার মনকে পবিত্র করুন এবং তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করুন।’ বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, এরপর এ যুবককে কারও প্রতি তাকাতে দেখা যেত না। -শোয়াবুল ইমান : ৫৪১৫