মনে পড়ে, ছোটবেলায় শুনেছিলাম কাউকে কুকুর কামড়ালেই তার নাভির গোড়ায় ১৪টি ইনজেকশন দিতে হবে। ইনজেকশন না দিলে জলাতঙ্ক হবে। সেই রোগ হলে আর পানি খাওয়া যায় না। কী একটা ভয়াবহ অবস্থা। নাভির গোড়ায় ইনজেকশন আর পানি খেতে না পারার দৃশ্য দুটি আমার মানসপটে ভেসে উঠত। কুকুর দেখলেই তাই অসম্ভব ভয় পেতাম। কামড়ে দিলেই তো মহাবিপদ!
এ দেশে এমন বহু মানুষই খুঁজে পাওয়া যাবে, যাঁরা কুকুর ভয় পান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভয়ের কারণ একটাই—যদি কামড়ে দেয়! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কুকুর কেন কামড়ায়, জানেন? কুকুর যদি কোনো কারণে আপনাকে হুমকি মনে করে, কেবল তখনই আসে কামড়ানোর প্রশ্ন। নইলে নিতান্তই নিরীহ এক প্রাণী কুকুর। আসলে কুকুরের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করার কারণে অনেক মানুষই কুকুরের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন। কুকুরের প্রতি মানুষ খারাপ আচরণ করে বলেই কোনো কোনো কুকুর মানুষকে কামড়ায়।
আচরণের কিছু ভুল
অনেকে কুকুর দেখলেই তাড়িয়ে দিতে চান। ‘হুস’জাতীয় শব্দ করে নিজেরাই কুকুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শান্তভাবে বসে থাকা কুকুরের চোখে এভাবেই নিজেদের ‘সন্দেহজনক মানুষ’ হিসেবে প্রতীয়মান করে তোলেন। শিশুরা অনেক সময় দুষ্টুমি করে কুকুরের গায়ে ঢিল ছোড়ে। আবার কুকুর ঘেউ ঘেউ করলে কোনো কোনো মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দৌড়াতেও শুরু করেন। এগুলো সবই ভুল আচরণ।
জলাতঙ্ক নিয়ে আতঙ্ক?
সব কুকুরই জলাতঙ্কের জীবাণু বহন করে না। কেবল জলাতঙ্ক আক্রান্ত অন্য কোনো প্রাণীর কাছ থেকেই তার শরীরে জলাতঙ্কের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। আপনার এলাকায় সরকারি উদ্যোগে কুকুরদের জলাতঙ্কের টিকাদান কর্মসূচি চালাতে দেখেছেন কি? তাহলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। বিগত এক বছরের মধ্যে না হয়ে থাকলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় এমন কর্মসূচির ব্যবস্থা করতে পারেন। কর্মসূচির দিন এলাকার প্রতিটি কুকুরকেই ‘ধরেবেঁধে’ টিকা দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। তাতেও অসুবিধা নেই। যে কুকুরকে টিকা দেওয়া হলো না, সে কী করেইবা জলাতঙ্কে আক্রান্ত হবে, যদি আশপাশে অন্যদের জলাতঙ্ক না থাকে? আর অন্যদের তো টিকা দেওয়াই হলো। অবশ্য ভিন্ন প্রজাতির কোনো সদস্যের (যেমন শিয়াল) আক্রমণে এলাকার কুকুরের জলাতঙ্ক হতে পারে, যদি তার টিকা দেওয়া না থাকে। তারপরও বাস্তবতা হলো, টিকা দেওয়া থাকলে জলাতঙ্কের ঝুঁকি কমে যায়।