ছোটগল্প সম্পর্কে বহুল প্রচলিত লাইনগুলো রবীন্দ্রনাথের—‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হইয়াও হইল না শেষ।’ এর সঙ্গে আমাদের অনুভবে ও চেতনায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির অপূর্ব মিল দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। তার নেতৃত্বে বাঙালির নিজের রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
‘যুদ্ধের ছাই-ভস্ম থেকে সমৃদ্ধির পথে’-বাংলাদেশের অনন্য অভিযাত্রাসর সূচনাও তার হাত ধরেই। অপশক্তির চক্রান্তে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ তিনি শহীদ হয়েছেন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। কিন্তু এখানেই বঙ্গবন্ধু শেষ হয়ে যাননি। আমাদের চিন্তায় ও চেতনায় জাগরূক থেকেছেন।
কার সাধ্যি এই অমরাত্মার সমাপ্তি টানার। এমনি অক্ষয় অম্লান ‘ধন্য এই পুরুষ’ যে ‘... যার নামের উপর / কখনো ধুলো জমতে দেয়না হাওয়া / ... যার নামের উপর পাখা মেলে দেয় / জ্যোৎস্নার সারস।’ (শামসুর রাহমান)। তাই তো ‘...তার নামের উপর পতাকার মতো / দুলতে থাকে স্বাধীনতা’ (ঐ)।
বহু সংগ্রাম আর তিতিক্ষার পর আমরা আবার তার দেখানো পথেই ফিরেছি। ফিরতে পেরে আমরা নিশ্চয় আপ্লুত। তবু ঐ ‘অন্তরে অতৃপ্তি’ তো রয়েছেই। বারবার মনে হয় যদি বঙ্গবন্ধুকে ওই শোকের আগস্টে হারিয়ে না ফেলতাম তাহলে হয়তো আজ আরও অনন্য উচ্চতায় থাকতো তার প্রিয় বাংলাদেশ। এই অতৃপ্তিটুকু তো থেকেই যাবে।
বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ করে তোলার অভিযাত্রায় আমাদের তাগিদ হিসেবেও কাজ করবে এই অতৃপ্তি। তাই বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা যায় বাঙালির শেষ হয়েও অশেষ গল্প হিসেবে। বাঙালির মহত্তম এই ছোট গল্পের পাঠ চলবে নিরন্তর।
স্বভাবতই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাঙালি কথাসাহিত্যিকেরা অসংখ্য গল্প লিখেছেন। উপন্যাস, নাটক, চিত্রকলাসহ শিল্পকলার অন্যান্য শাখাতেও বঙ্গবন্ধু একইভাবে উপস্থিত আছেন। তবে এই লেখায় তাকে নিয়ে আমাদের কথাসাহিত্যিকদের লেখা ছোটগল্পগুলোর সরল বিশ্লেষণ হাজির করে তাকে স্মরণ করতে চাই।