১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতই ছিল একমাত্র ও নির্ভরযোগ্য মিত্র দেশ। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি লোক সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। দেশটি দীর্ঘ ৯ মাস আশ্রয়প্রার্থী এই বিপুলসংখ্যক মানুষের আশ্রয় ও আহারের ব্যবস্থা করেছে। তা ছাড়া সারাবিশ্বকে তাদের দুরবস্থা এবং পাকিস্তানিদের বর্বরতার কথা জানিয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার ৯ মাস পর ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হয়। জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে ধর্মকে ভিত্তি করে পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর দ্বি-জাতিতত্ত্বের সমাধি রচিত হয়।
বাংলাদেশকে হানাদারমুক্ত করতে ভারতীয় বাহিনীকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়। একাত্তর সালে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের তিন সহস্রাধিক সৈন্য নিহত হয়। এর পর সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে ভারত সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ’৭১ সালে দুই দেশের মধ্যে যে মোহনীয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, এক সময় তাতে ভাটা পড়ে। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রাক্কালে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা দেখা যায়। পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তা ভয়ংকর রূপ নেয়। বাংলাদেশে এ সময় বিশেষ করে মৌলবাদী সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তা ছাড়া জিয়া ও এরশাদের মতো স্বৈরাচারদের সমর্থন পেয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন এজেন্সি বাংলাদেশে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে তারা সীমান্তবর্তী বিশেষ করে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মণিপুরের মতো ভারতীয় রাজ্যগুলোতে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করত। এমনকি ভারতীয় বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং লুকিয়ে থাকার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করার অনুমতি দিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশ এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়। কিন্তু সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরোনো সেই দুষ্কর্ম ফিরে আসে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ভারতীয় বিদ্রোহীদের ৬০টি ঘাঁটির অস্তিত্বের কথা জানানো হয়। খালেদা জিয়ার সরকার এগুলো নির্মূলে কোনো উদ্যোগ তো নেয়ইনি, বরং তা অস্বীকার করে। ফলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে সুদৃঢ় করার একটি সুযোগ তারা হাতছাড়া করে। এতে বাংলাদেশ উজানে বিভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা লাভে ব্যর্থ হয়। ফলে দেশ ক্রমান্বয়ে মরুভূমিতে পরিণত হতে থাকে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়ও চাপা পড়ে যায়।