১৯৫৬ সালে খুলনার খালিশপুরে ১১৩ একর জমির ওপর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাটকল ক্রিসেন্ট জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ৬৫ বছর চলার পর লোকসানের কারণে ২০২০ সালের জুলাই মাসে এটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয় সরকার। শ্রমিকদের পাওনাও কিছুটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
পাটকলটি তিন মাস পর আবার চালু হবে, এমন প্রতিশ্রুতিও তখন দেওয়া হয়; কিন্তু তিন বছরেও তা চালু হয়নি। অযত্নে-অবহেলায় অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে ক্রিসেন্ট জুট মিলের যন্ত্রপাতি। কোনো বরাদ্দ না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণও নেই। ফলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন এই পাটকলের শত শত তাঁত মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ক্রিসেন্ট জুট মিল বন্ধ করে দেওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক। তাঁদের অনেকেই এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ মুটে-মজুরের কাজ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিলের পর ক্রিসেন্ট জুট মিলই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় জুট মিল।
সম্প্রতি খুলনার খালিশপুরের ক্রিসেন্ট জুট মিলে গিয়ে দেখা গেছে, একসময়ের কর্মচাঞ্চল্যে মুখর এলাকাটি অনেকটাই পোড়োবাড়ির মতো পড়ে আছে। শ্রমিক কলোনির ভবনগুলোর জীর্ণদশা। ভবনের দেয়ালে গুল্মজাতীয় গাছ জন্মে গেছে। দু-একজন নিরাপত্তারক্ষী ও কয়েকটি শ্রমিক পরিবার ছাড়া সেখানে আর কেউ থাকেন না। তবে গাছগাছালিতে ভরা কলোনিটির কিছুই বদলায়নি। শুধু মানুষ নেই। তিন বছর আগে দুই হাজার শ্রমিক পরিবারকে কলোনি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
কলোনি পেরিয়ে একটু এগোলেই মূল কারখানার গেট। নিরাপত্তারক্ষীরা প্রবেশে বিধিনিষেধের কথা শোনান। পরে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই মন খারাপের আরও গল্প শুরু। ২ নম্বর কারখানার ভেতরে কয়েক শ তাঁত মেশিন, যেখানে একসময় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কাজ করতেন। কারখানা ভবনজুড়ে পাট থেকে সুতা তৈরির যন্ত্রপাতি, চট সেলাইয়ের মেশিন, ওজন করার যন্ত্র, চটের বস্তায় ছাপ দেওয়ার যন্ত্রগুলো সারি সারি সাজানো। তবে তাঁত মেশিনে জং ধরেছে, এটা-সেটা খুলে পড়ে গেছে। অনেক সেলাই মেশিন ভাঙা। ওজন করার যন্ত্র অকেজো। জানা গেল, যন্ত্রগুলো ঠিকঠাক রাখতে কোনো বরাদ্দ ও কর্মী নেই।