চুক্তি নবায়নে রাশিয়ার অস্বীকৃতির কারণে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার শস্য চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ায় বিশ্বে গম রফতানিকারক শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলো হয়ে গমসহ খাদ্যশস্য রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে গমের দাম। এতে গম আমদানিকারক বাংলাদেশসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশ আমদানির জন্য গম প্রাপ্তিতেই শুধু অসুবিধার সম্মুখীন হবে না, বরং তাদের গম আমদানিতে অধিক অর্থ ব্যয় করতে হবে। গমে বাংলাদেশের প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভরশীল হয়ে পড়া এবং এজন্য দেশকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে তা আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। এরপর রাশিয়া ইউক্রেন বন্দরগামী জাহাজগুলোকে সম্ভাব্য সামরিক টার্গেট হিসেবে বিবেচনার ঘোষণা দিলে ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলো হয়ে গম, ভুট্টা, সার ইত্যাদির রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম প্রধান শস্য ও তেলবীজ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত ইউক্রেন। সেই দেশের উৎপাদিত খাদ্যশস্য চাহিদা মেটায় প্রায় ৪০ কোটি মানুষের। এদিকে ইউক্রেনের ৯০ শতাংশ রফতানি হয় কৃষ্ণ সাগর রুটে। এর বাইরে সমুদ্রপথে দেশটির বিকল্প আর কোনো পথ নেই। রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর পরই ইউক্রেন থেকে শস্য রফতানি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের দামে উল্লম্ফন ঘটে। জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের ২২ জুলাই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ‘কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি সই হয়। এতে চালু হয় ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’ খ্যাত ইউক্রেনের শস্য রফতানি। দুবার চুক্তিটি নবায়নে রাজি হলেও তৃতীয়বার ১৭ জুলাই চুক্তিটি নবায়নের শেষ দিনে রাশিয়া শস্য চুক্তি নবায়ন থেকে সরে আসে।