২০১২ সালে কেবল সোনালী ব্যাংক হইতে সাড়ে তিন সহস্র কোটি টাকা লোপাট সম্পর্কিত হলমার্ক কেলেঙ্কারি ফাঁস হইবার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটি তো বটেই; সম্পূর্ণ ব্যাংক খাত লইয়া জনপরিসরে যেই তোলপাড় চলিয়াছিল, উহার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই খাতে সুশাসন নিশ্চিতে তৎপর হইবে বলিয়া আশা করা হইয়াছিল। দুঃখজনক, সেই আশা ইতোমধ্যে হতাশায় রূপ লইয়াছে। অন্তত দেশের বৃহত্তম ব্যাংকটির উপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত গত ডিসেম্বরভিত্তিক বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদন উহাই বলিতেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, তথায় বলা হইয়াছে– সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ন্যূনতম জবাবদিহি না থাকায় ব্যাংকটির ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ক্রমান্বয়ে বাড়িতেছে। এমনকি গুরুতর অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হইতেছে না। এই অবস্থায় দেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যাংকটির সুশাসন ব্যবস্থা ‘উদ্বেগজনকভাবে’ ভাঙিয়া পড়িয়াছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ২০২০ ও ২০২১ সালে অনিয়মে জড়িত অন্তত ৫৬ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হইয়াছে, যাহাদের বিরুদ্ধে যথাযথ কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গৃহীত হয় নাই; এমনকি কেহ কেহ পদোন্নতিও পাইয়াছেন।
অধিকতর ক্ষোভের বিষয়, মে মাসে অনুষ্ঠিত সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি উত্থাপিত অভিযোগমতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রায় উদাসীন। ইতোমধ্যে ব্যাংকটিতে নূতন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন। তিনিও চিহ্নিত অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্বসূরির অনুরূপ কালক্ষেপণ কৌশল লইয়াছেন বলিয়া মনে হইতেছে। এমন আশঙ্কা অমূলক নহে, যেই রাজনৈতিক আশীর্বাদ হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতাদের অন্তত একটা সময় পর্যন্ত ভরসা জোগাইয়াছিল, উহাই ব্যাংকটির দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ছায়া দিয়া চলিয়াছে। স্বাভাবিকভাবেই দলীয় পছন্দের ভিত্তিতে নিযুক্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ উক্ত দুর্নীতির বিষয়টি এড়াইবার কৌশল লইয়াছে।