ত্বকের ধরন বুঝে যত্ন ভিন্ন হয়। তৈলাক্ত ও সংবেদনশীল ত্বকের যত্ন একরকম, আবার রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের যত্ন হয় অন্যরকম। ত্বক অতিরিক্ত রুক্ষ হলে দেখা দিতে পারে সোরিয়াসিস, চামড়া ফাটা ও অন্যান্য সমস্যা।
শুষ্ক ত্বক চিনুন: খসখসে, রুক্ষ, অমসৃণ ত্বক শুষ্ক ত্বকের লক্ষণ। এ ধরনের ত্বকে মাঝেমধ্যে চুলকানি হতে পারে। আর্দ্রতার অভাবে শুষ্ক ত্বক বিবর্ণ ও নিষ্প্রাণ দেখায়। শুষ্ক ত্বকের রোমছিদ্রগুলো খুব ছোট ও টাইট হয়।
শুষ্ক ত্বকের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আর্দ্রতা। তাই ডিপ হাইড্রেশন হয় এমন ময়েশ্চারাইজার ও ক্রিম ব্যবহার করুন। দিনে সর্বোচ্চ একবারের বেশি ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোবেন না। নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। শুষ্ক ত্বকে ব্যবহৃত ফেসওয়াশ যেন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ত্বক ভালো রাখতে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
ঘরেই বানান ফেসপ্যাক
শসা: শসা ত্বককে শীতল ও সতেজ করে। ত্বকের জ্বালাপোড়া, চুলকানির সমস্যা দূর করতে শসা কার্যকরী। অর্ধেক শসা কুচি করে এর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দিন। মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। এর পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার এটি লাগাতে পারেন।
চন্দন: ছোপ ছোপ দাগ, চটচটে ভাব এবং জ্বালা নিরাময়ের জন্য খুবই কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান চন্দন। ১ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়ার সঙ্গে ১-৪ চা চামচ নারকেল তেল ও ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে তিনবার ফেসপ্যাকটি লাগাতে পারেন।
ডিমের কুসুম: ডিমের কুসুমে ময়েশ্চারাইজিং ফ্যাট থাকে, যা শুষ্ক ত্বককে সতেজ করে। ত্বকে জোগায় পুষ্টি। ১টি ডিমের কুসুমের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশে যাওয়া পর্যন্ত বিট করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কলা: কলায় রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং, অ্যান্টি-রিঙ্কেল এবং অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য। মধু ও অলিভ অয়েলে রয়েছে ইমোলিয়েন্ট, যা ত্বককে গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। ১-২টি পাকা কলার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
গোলাপের পাপড়ি: ১টি গোলাপ ফুলের সঙ্গে ১ চা চামচ গ্রাউন্ড ওটস এবং পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে গোলাপের পাপড়িগুলো ভালোভাবে পিষে নিন। এর পর মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। আরও ভালো ফলাফল পেতে গোলাপ জলে ভিজিয়ে একটি তুলার প্যাড বা তুলার বল দিয়ে আপনার ত্বক মুছে নিতে পারেন। এভাবে সপ্তাহে এক দিন প্যাকটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন। মুলতানি মাটি: মুলতানি মাটি প্রায়ই তৈলাক্ত ত্বকের ফেসপ্যাকগুলোয় ব্যবহৃত হয়। মধুর সঙ্গে মিশিয়ে শুষ্ক ত্বকে এটি ব্যবহার করলে ত্বক ময়েশ্চারাইজিং হয়। ১-২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু ও পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মিশ্রণটি লাগিয়ে প্রায় ১০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করুন।
কমলার রস: কমলার রস ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’ । ভিটামিন ‘সি’ ত্বক মেরামত করতে, বলিরেখা কমাতে ও ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। ১-২ টেবিল চামচ কমলার রসের সঙ্গে এক থেকে দেড় টেবিল চামচ ওটমিল ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে লাগান। এর পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ফেসপ্যাকটি ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা ত্বককে সতেজ করে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য। এই প্যাকটি ব্যবহার করার পর আপনার ত্বক হবে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়। ২ টেবিল চামচ তাজা অ্যালোভেরা জেল, ১ চা চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া (ঐচ্ছিক) নিয়ে সব উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। এর পর মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দু’বার ফেসপ্যাকটি লাগাতে পারেন।