সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক শরণার্থী সংকট যে রূপ নিয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি। বর্তমানে সাড়ে তিন কোটির বেশি মানুষ সংঘাত, সহিংসতা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার। গত মাসে বিশ্ব শরণার্থী দিবসে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের ব্যাপারে বৃহত্তর সচেতনতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে শরণার্থীদের চাহিদা ও অধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার সুযোগ এখনও খুব সীমিত। এই শরণার্থীদের যেমন খাদ্য এবং বাসস্থানের চাহিদা রয়েছে, তেমনি ন্যায়বিচার এবং দুর্ভোগের স্মৃতিচারণ করার অধিকারও রয়েছে, বিশেষ করে যেহেতু তাদের এই পরিণতি মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে ঘটেছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বাস। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার সরকার রাখাইনের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালালে প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন চালাচ্ছে। যার ফলে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত এসব শরণার্থী রোহিঙ্গার অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাদের অন্যান্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মনোসামাজিক সহযোগিতাও প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা বিশ্বের দায়িত্ব। এ লক্ষ্যে সত্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সত্য কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। সেখানে রোহিঙ্গারা তাদের দুঃসহ অভিজ্ঞতা জানাবে। জবাবদিহির প্রশ্নগুলো কমিশনই করবে এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে তা সহযোগিতা করবে। শরণার্থীদের নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তাদের নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার অভিজ্ঞতা এবং বিদেশি ভূমিতে বাস্তুচ্যুত মানুষ হিসেবে তাদের বর্তমান পরিস্থিতির বিশদ বিবরণ নথিভুক্ত করা প্রয়োজন।