এই সময়টায় কাঁচা মরিচের দাম বাড়া তো বিচিত্র নয়। প্রায় প্রতিবছর বৃষ্টিবাদলের সময়ে এর দাম বেড়ে যায়। ক্রেতারা সেটা মেনেও নেন। কেননা মূল্যবৃদ্ধিটা থাকে মাত্রার মধ্যে। আর বাজার সামগ্রিকভাবে অশান্ত না হলে দু-একটা নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়লেই বা কী! তবে পণ্যবাজার যখন সামগ্রিকভাবে অশান্ত, তখন কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়লে এবং বাড়তে বাড়তে রেকর্ড করে ফেললে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের মনে
তা ক্ষোভের জন্ম দেয়। সম্প্রতি ফেসবুকে মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ হয়ে দেশের কোথাও কোথাও ১ হাজার টাকা হয়ে যাওয়ায়।
এটা আবার ঘটেছে ঈদের সময়ে, যখন মানুষ মোকাবিলা করছিল প্রায় সব ধরনের মসলার বড় মূল্যবৃদ্ধি এবং কোরবানির গরু-ছাগলের দাম নিয়ে অস্থিরতা। কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়ছে দেখে সরকার অবশ্য এটি আমদানির সুযোগ করে দেয়। এর আমদানি গত বছরের আগস্ট থেকে বন্ধ ছিল। জরুরি না হলে এবং দেশীয় উৎপাদকদের জন্য লাভজনক দাম নিশ্চিতের প্রশ্ন থাকলে কৃষিপণ্যের আমদানি বন্ধ রাখাই উচিত। কিন্তু সরকারকে তো বিপুলসংখ্যক ভোক্তার স্বার্থও দেখতে হয়। তাই কোনো পণ্যের দাম মাত্রাছাড়া হয়ে গেলে সেটির আমদানি উন্মুক্ত করাটাও কাম্য।
এখানে সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন রয়েছে। কারণ বেশি দেরি করে ফেললে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে সময় লাগে না। কাঁচা মরিচের বেলায় সেটাই ঘটেছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেছিল কৃষি মন্ত্রণালয় তথা সরকার। তাতে এর দাম ৩০-৩৫ থেকে বাড়তে বাড়তে কেজি ৯০-১০০ টাকা হয়ে যায়। আর কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রে যা ঘটল, তা বোধ হয় সরকারকেও বিস্মিত করেছে। এর দাম ৮০০-১০০০ টাকা অবশ্য হতো না যদি ঈদের ছুটিতে পড়ে না যেত আমদানি কার্যক্রমটি। ২৫ জুন ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তাতে ছুটি শুরুর আগে সম্ভবত জুনের ২৬ তারিখেই কেবল কিছু কাঁচা মরিচ আনা গেছে উত্তরবঙ্গের স্থলসীমান্ত দিয়ে। এতে ভোক্তার কোনো লাভ হয়নি। এ পরিস্থিতিতে এমনও হয়ে থাকে, দেশব্যাপী অব্যাহত আলোচনার কারণেও পণ্যের দাম বেড়ে যায় অবিশ্বাস্যভাবে। যেসব এলাকা কাঁচা মরিচ উৎপাদনের জন্য খ্যাত, সেখানেও দেখা গেল দাম, এমনকি বড় শহরের চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। ঘটেছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ার ঘটনাও।
সবচেয়ে বড় কথা, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার কাঁচা মরিচ উৎপাদন বেশি মার খেয়েছিল। বর্ষা শুরুর আগে দফায় দফায় তাপপ্রবাহের চাপেও এর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশ্ন হলো, কৃষি মন্ত্রণালয় কি সময়মতো এটা জানতে পারেনি? বাণিজ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, কাঁচা মরিচের উৎপাদন পরিস্থিতি দেখভাল ও জানার কথা কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সেল রয়েছে, যার কাজ দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও এর পূর্বাভাস দেওয়া। কথা হলো, তারাও কি সর্বসাধারণের নিত্যব্যবহার্য পণ্য কাঁচা মরিচের উৎপাদন, চাহিদা, দাম ইত্যাদির দিকে নজর রাখেনি?