উৎসব-পার্বণে মানুষ কেন ঢাকা ছাড়ে? ঢাকাকে ঘিরেই তো রচিত যেন গোটা দেশ; যেখানে মিলমিশ ঘটেছে সব কর্ম, স্বপ্ন ও গন্তব্যের। চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়ালেখা, চিকিৎসা—সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে—টেকনাফের লবণ ব্যবসায়ীর একখানা ‘ঢাকা অফিস’ না থাকলে বাজারে সুনাম থাকে না, তেঁতুলিয়ার কৃষিখামারের মালিকেরও চাই ঢাকায় একটা ঠিকানা। সরকারি তো বটেই, আধা সরকারি, বেসরকারি—এমনকি নিতান্ত অঞ্চলভিত্তিক বহু খাত বা উদ্যোগের প্রধান কার্যালয় ঢাকায়।
এর বড় এক কারণ প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়া। যদিও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও ই-কমার্সের প্রসার ঢাকামুখী এই প্রবণতায় কিছুটা ভাটার টান ফেলছে; কিন্তু ঢাকাকে ঘিরে এখনো আবর্তিত প্রায় গোটা দেশের লাইফলাইন তথা জীবন ও জীবিকা। ২০১৭ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও নিপোর্টের এক বিশ্লেষণে তার প্রমাণ মেলে। ওই বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রতিদিন ১ হাজার ৪১৮ জন মানুষ বাড়ছে। এই হিসাবে বছরে যুক্ত হচ্ছে গড়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ মানুষ। বোঝাই যায় ঢাকায় এক টুকরা জমি অথবা একটি ফ্ল্যাটের জন্য দিওয়ানা কেন রাম থেকে রহিম—প্রায় সবাই!
তবু এই সবকিছুর সমাহার ঢাকাও উৎসব-পার্বণে কেমন খালি হয়ে হয়ে যায়! ঢাকায় যাঁরা বসবাস করেন, ঈদ-পূজাসহ নানা পার্বণে তাঁরা গ্রামের বাড়ি যান। শুধু ঢাকা নয়, অন্য শহর বা কর্মস্থল থেকে মানুষের এই বাড়ি ফেরা গণমাধ্যমের ধারাভাষ্যে-বর্ণনায় ‘শিকড়ের টান’, ‘নাড়ির টান’—এ দুটি শব্দযুগলে ঘুরেফিরে উচ্চারিত হয়। এই বাড়ি তাঁদের জন্মভিটা, বাপ-দাদার বসতি, গাঁওগেরাম; এই বাড়ির আরেক নাম ‘দ্যাশ’—এ যেন দেশের ভেতরে আরেক দেশ!