‘আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি/ বেচো না বেচো না বন্ধু তোমার চোখের মণি… ঘরদোর বেচো ইচ্ছে হলে, করবো নাকো মানা/ হাতের কলম জনম দুখী, তাকে বেচো না।’
ঠিক কী অর্থে বন্ধুবর প্রতুল মুখোপাধ্যায় সমীর রায়ের এই লাইনগুলোয় সুর ও কণ্ঠ দিয়েছিলেন, তা অনুমান করা মোটেই কঠিন নয়। সহজিয়া ভঙ্গির প্রায় খালি গলায় গানটি গেয়ে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। লেখকের কলম যখন মানুষের বিরুদ্ধে যায়, তখন দুখী কলমের কিছু করার থাকে না। বাজেটে সব সময় বঞ্চিত হয় সংস্কৃতি, যদিও এই খাতে বরাদ্দ করা অর্থের ব্যয় কতটা সঠিকভাবে হয়, তাও আমরা জানি না।
দুর্ভাগ্যবশত, এবার বাজেটে কলমের ওপরেই কর বসানো হয়েছিল। যদিও পরে কলমের উপকরণ থেকে বাড়তি ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু চিন্তাটা কেন এসেছিল– সেটাই বড় প্রশ্ন। কলম থেকে কত টাকাই বা রাজস্ব আদায় হতো, তা অবশ্য আমরা জানি না। কিন্তু কলম তো শিক্ষা উপকরণ। কাগজের ওপর হঠাৎ দাম বাড়ায় গত একুশে বইমেলার আগে প্রকাশকদের ত্রাহি রব আমরা শুনেছি। এবার বোধ হয় চিন্তা করা হয়েছিল, বড় লোকের ছেলেরা কলম দিয়ে লিখবে না; ল্যাপটপ বা কম্পিটারে লিখবে। কলম হাতের সঙ্গে মস্তিষ্কের একটা যোগাযোগ রয়েছে বটে, বড় লোকের ছেলেরা যে দামেরই হোক, তা কিনে নিতে অসুবিধা কোথায়? দরিদ্র, নিম্ন-মধ্যবিত্তরা ‘দামি’ কলম কিনবে কীভাবে, সেটা বোধ হয় অর্থমন্ত্রী ভাবেননি। ধনবিজ্ঞানে পটু আমলাদেরও কলমের মতো কোমল বিষয়ে স্পর্শকাতরতা আছে বলে মনে হয় না।