প্রয়াত হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কাণ্ডারি সিরাজুল আলম খান। ৮২ বছর বয়সে নানা জটিল রোগে ভুগে শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। বেশ পরিণত বয়সে ঘটলেও, তাঁর এ চিরবিদায় যে বহু মানুষকে স্বজন হারানোর বেদনায় সিক্ত করছে– তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কারণ, সিরাজুল আলম খান গত শতকের সত্তরের দশকের শেষদিক থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও অন্তত স্বাধীনতার পূর্বাপর দেড় দশকের রাজনৈতিক ইতিহাস তাঁকে ছাড়া লেখা সম্ভব নয়। এ সময়ে যে লাখ লাখ তরুণ-তরুণীকে তিনি প্রথমে স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ে সমাজতন্ত্রের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন; অন্তত তাঁরা তাঁকে ভুলবেন কেমন করে?
কিন্তু এ তো সিরাজুল আলম খানের বিষয়ে এক সময়ের শিষ্য ও ভক্তদের বলা। তাঁর প্রয়াণে এই বৃত্তের বাইরে জনগণের বৃহত্তর অংশের প্রতিক্রিয়া কী? সেখানে কিন্তু সবকিছু প্রায় সুনসান। হ্যাঁ; নিজের অছিয়তে সিরাজুল আলম খান এমনই একটা অনাড়ম্বর– প্রায় সাড়াশব্দহীন বিদায় অনুষ্ঠান বা ফিউনারেলের কথা বলে গিয়েছিলেন। তাই বলে বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁকবদলের অন্যতম এক কারিগরের চিরবিদায় নিয়ে জনপরিসরে কথা হবে না! যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে এখন সবকিছুর দর্পণ বলা হয়, সেদিকে তাকালে আরও বিস্মিত হতে হয়। মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুকে ‘রহস্যপুরুষ’-এর বিদায় বলা হলে নতুন প্রজন্মের অনেকেই প্রশ্ন করেছেন– কে এ ‘রহস্যপুরুষ’? ইতিহাসে যাঁর যা অবদান, তার স্বীকৃতি দেওয়াই জাতির কর্তব্য। ব্যক্তির হাতে লিপিবদ্ধ হলেও ইতিহাস যেহেতু চূড়ান্ত বিচারে নৈর্ব্যক্তিক; বাংলাদেশের ইতিহাসও সিরাজুল আলম খানের জন্য যোগ্য স্থান বরাদ্দ করবে– এ প্রতীতি আমার আছে। কিন্তু যিনি বাংলাদেশের আকাশে এক সময় ঝড় জাগিয়েছিলেন এবং সে সুবাদে যাঁর অন্তত এ দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে চে গুয়েভারার মতো নন্দিত-বন্দিত হওয়ার কথা ছিল, তিনি এতটা বিস্মৃতির শিকার হলেন কেন?