২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট এ মাসের শুরুতে আমরা পেলাম তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এটা মানতেই হবে যে, বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই বাজেট প্রস্তাবের আয়, ব্যয় ও ঘাটতি অর্থায়ন সবগুলো দিকেই অন্তত কিছু কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে আরও ভাবনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তাই বলে অনেকের মতো আমি ঢালাওভাবে এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলব না। আমার কাছে বরং এই বাজেটকে বাস্তবানুগই মনে হচ্ছে। অনেকটা ভবিষ্যৎমুখী এই বাজেটে বেশকিছু প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবনাও রয়েছে। ফলে এই প্রস্তাবনাকে সময়োপযোগীও বলা চলে। সত্যি বলতে বাজেট তো নিছক অ্যাকাউন্টিং নয়। বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক দলিল হিসেবে বিপদসংকুল সময়ে জনমনে আস্থা তৈরিই বাজেটের মূল লক্ষ্য। সে বিচারে এ বাজেটের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি সামষ্টিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা থেকে নিম্নআয়ের মানুষকে সুরক্ষা দিতে যে প্রস্তাবনা বা পরিকল্পনাগুলো হাজির করা হয়েছে এগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এ বাজেট জনমনে বেশ খানিকটা ভরসা সঞ্চার করতে সচেষ্ট হয়েছে এমনটি বলাই যায়।
তবে বাজেট কতটা আশাবাদী কিংবা উচ্চাভিলাষী সেটি মুখ্য প্রশ্ন নয়। আমাদের বরং ভাবা চাই এই বাজেট বাস্তবায়নের পথে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে। কেননা আমরা এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামষ্টিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি আমরা। কাজেই এ সময়ে বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়নে গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো বিকল্পই নেই। এ প্রসঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনাটির দিকে প্রথমে নজর দেওয়া যাক। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা বলে আসছিলাম যে, আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত খুবই কম (১০ শতাংশের আশপাশে আটকে আছে), যা আমাদের প্রবৃদ্ধির বলশালী ধারার সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সর্বশেষ আইএমফের তরফ থেকেও জিডিপির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাজস্ব আয় বাড়ানোর ইতিবাচক তাগিদটি লক্ষণীয়। এই প্রেক্ষাপটে আসছে অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেট বরাদ্দ যতটুকু বাড়িয়েছে, সে তুলনায় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে বেশি (বাজেট বেড়েছে ১৫.৩৩ শতাংশ, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১৫.৪৭ শতাংশ)।