ভয়াবহ অর্থনৈতিক বৈষম্য, কর্মসংস্থানের অভাব, বেসরকারি খাতে অপ্রতুল বিনিয়োগ, ডলার সংকট, গ্যাস ও কয়লার অপ্রতুল জোগানে জ্বালানি সংকট, অর্থ পাচারের ফলে অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ, রিজার্ভ সংকট, অসহনীয় মূল্যস্ফীতি, প্রবাসী আয় প্রবাহে অস্থিরতা এবং মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ভেঙে জীবনযাপনের পুঞ্জীভূত সংকটের মধ্য দিয়ে পেশ করা হলো নতুন আর্থিক বছরের বাজেট।
এতসব সংকটের চাপেও অর্থমন্ত্রী পেশ করেছেন ঢাউস আকারের ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ৩৫ শতাংশ। বিরাট অঙ্কের এ ঘাটতি মেটানোর জন্য যে ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে, তা হলো ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ হিসাবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে প্রাপ্তি ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। দেশীয় সূত্র থেকে যে ঋণ আসবে তার উৎস হলো ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য একেবারেই সন্তোষজনক নয়। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ মানে টাকা ছাপানো। টাকা ছাপিয়ে ব্যয় নির্বাহ করা হলে মূল্যস্ফীতি আরও লাগাম ছাড়া হয়ে উঠবে। মধ্যবিত্ত, নিুবিত্ত ও গরিব মানুষের দুরবস্থা বাড়বে। যারা দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করেছিল তারা আবারও দরিদ্র হয়ে যাবে। দরিদ্ররা হবে হতদরিদ্র। রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা হয়েছে, ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আমাদের রাজস্ব ব্যবস্থা প্রশ্নাতীতভাবে দুর্বল। এ ব্যবস্থা অতীতে প্রায়ই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। কীভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে এত বিশাল অঙ্কের রাজস্ব প্রাপ্তি সম্ভব হবে তা ভেবে কূল পাই না। বিগত অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ১০ মাসে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। অনুরূপ ঘাটতি নতুন অর্থবছরে হবে না, তার জন্য আস্থা পাব কোথায়? আইএমএফ’র ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে নতুন অর্থবছরে বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এটাও কি সম্ভব হবে?