আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে বর্তমানের সাড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে সাড়ে ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার বড় আশাও দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার দুরূহ সংকল্পও প্রকাশ করেছেন। বাজেটে রাজস্ব আদায়ের কিছু কিছু প্রস্তাব হয়তো সীমিত আকারে কার্যকর ফল দেবে। কিন্তু সার্বিক বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রত্যাশা ছিল, এই বাজেটে অর্থনৈতিক খাতকে সুসংহত, সমন্বিত এবং বরাদ্দের বণ্টনের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এ রকম বিশেষ উদ্যোগী বাজেট পরিকল্পনা প্রত্যাশিত হলেও তা হয়নি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। বিষয়টি বিস্ময়কর এবং অসমর্থনযোগ্য। বাজেট প্রস্তাবের আগে থেকেই বলা হচ্ছিল অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশি জোর দেওয়া হবে। কিন্তু সামগ্রিক অর্থনীতিকে এড়িয়ে এ দুটোর উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিশেষত কৃষিনির্ভর দেশ হওয়ায় আমাদের এখন কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি খাতে অবশ্য ভর্তুকি থাকবে, যদিও আইএমএফ বলেছে কৃষি খাতে ভর্তুকি কমাতে। তাদের সব কথাই আমাদের শুনতে হবে এর কোনো মানে নেই। কৃষি খাতে বরাদ্দ কমলে গবেষণা কার্যক্রম কমবে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আশঙ্কার ছায়া যখন ক্রমেই বি¯ৃÍত হচ্ছে তখন এ খাতে গবেষণা, উপকরণ, কৃষকের কাছে চাষের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ এবং জলবায়ু সংকটের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়ানো জরুরি। অথচ এ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে, এর ব্যাখ্যা পাওয়া গেল না স্পষ্টভাবে। বিষয়টি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এমনকি জ্বালানি খাতেও ভর্তুকি কমানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, জ্বালানি কোনো বিলাসদ্রব্য নয়। আমাদের যাপিত জীবনের সঙ্গে জ্বালানি জড়িত। পুরো বিশ্বে জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করা হয়। আমাদের এখানেও সমন্বয়ের মাধ্যমে জ্বালানির মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখার বিষয়ে পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে। বরাদ্দের অঙ্ক তো মূলত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি আর্থিক রূপরেখা দেয় মাত্র। সেজন্য সমাধানের কথাও বাজেট মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভাবতে হয়।