বাজেট নিয়ে সাংবাদিকতার শিক্ষক সাখাওয়াত আলী খানের একটি গল্প আছে। গল্পটি আমি আগেও লিখেছি। আসলে বাজেট এলেই আমার গল্পটি মনে পড়ে। সাখাওয়াত আলী খান একবার রিকশায় যেতে যেতে বাজেট নিয়ে রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। রিকশাচালক বললেন, এটুকু বুঝি বাজেট দিলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। তার কৌতূহল ছিল, যে জিনিস দিলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, সে জিনিস না দিলে কী হয়? তবে বাজেট দিলেই দাম বাড়ার সেই দিনও ফুরিয়েছে অনেক আগেই। এখন দাম বাড়ে বছরজুড়েই। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাই মূল্যস্ফীতির প্রবল চাপ সামলে যুদ্ধের অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে আগলে রাখা, জনগণকে স্বস্তি দেয়া।
বাজেট নিয়ে আমার বোঝাপড়াও সেই রিকশাচালকের মতই। স্বীকার করছি, বাজেট ব্যাপারটা আমি একদমই বুঝি না। অন্য সবার মত কোন জিনিসের দাম বাড়লো আর কোনটার কমলো; এটা মনোযোগ দিয়ে দেখি। আয়কর কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসলো কিনা দেখি। সংসদে অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করেছেন তা ২৪৮ পৃষ্ঠার। তবে আগের মত এখন আর অর্থমন্ত্রীকে পুরো বক্তৃতা পড়তে হয় না। প্রযুক্তির ছোঁয়া বাঁচিয়ে দিয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা আর বাজেট ডকুমেন্টস হিসেবে সরবরাহ করা মোটা মোটা সব বই নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো ভাবনা নেই। সাধারণ মানুষ একটু স্বস্তি চায়, শান্তি চায়।
বাজেট ভালো বুঝি না। তবে এটুকু বুঝি, একটা সংসারের যেমন সারাবছরের একটা পরিকল্পনা থাকে, আয়-ব্যয়ের একটা হিসাব থাকে, অনেক উচ্চাকাঙ্খা থাকে, বেড়ানোর পরিকল্পনা থাকে, চিকিৎসার জন্য খরচ বরাদ্দ থাকে। দেশেরও তেমনি। বাজেট মানে দেশের সারাবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব। এখানে সরকারের প্রায়োরিটি ঠিক করা থাকে। পরিবারের আয়-ব্যয়ের হিসাব করার সময়ও আমরা প্রায়োরিটি ঠিক করি। পারিবারিক হিসাবের সময় আমরা অনেক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা করি, যেমন বেড়ানোর পরিকল্পনা থাকে হয়তো মালদ্বীপ, শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয় কক্সবাজার। তেমনি দেশের বাজেটেও অনেক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা থাকে, যা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় না।