পাকিস্তান টাইমসের সম্পাদক এবং তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সমর্থক জিয়াউদ্দিন আহমেদ সুলেরির সহিত মানিক মিয়ার বিতর্ক হইয়াছিল। মানিক মিয়া সুলেরিকে লিখিয়াছিলেন, ‘সুলেরি সাহেব, আমি রাজনীতির জন্য সাংবাদিকতা করি, আর আপনি সাংবাদিকতার জন্য রাজনীতি করেন।’ তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একজন মুখ্যমন্ত্রীকে বলিয়াছিলেন, ‘দেখুন, একটু নরম হলেই বিপদমুক্ত হতে পারি; কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। নীতির পরিবর্তন করে আপস করা আমার কল্পনার বাইরে। কপালে যা আছে তা-ই হবে। না হয় সাংবাদিকতা ছেড়েই দেব; কিন্তু তাই বলে মানুষের কাছে ছোট হতে পারব না। সারা দেশ আমার নীতির সঙ্গে পরিচিত। হঠাৎ স্বার্থসিদ্ধির জন্য তা পালটাই কেমন করে!’
এই ছিলেন মানিক মিয়া। জীবদ্দশায় তিনি শাসকদের রাজনৈতিক রোষানলে পড়িয়া বারংবার জেল খাটিয়াছেন, জীবনের হুমকির সম্মুখীন হইয়াছেন; কিন্তু তাহার স্পষ্ট ভাষ্য কখনোই স্তিমিত হয় নাই। ব্যক্তিগত জীবনেও মানিক মিয়া ছিলেন স্পষ্ট বক্তব্যে অনড়। তাহার নিজস্ব বিশ্বাস ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। সেই বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্বল করিয়া তিনি লিখিয়াছেন, পত্রিকা সম্পাদনা করিয়াছেন। ইহার কারণে তাহাকে ভুগিতেও হইয়াছে এবং তিনি সেই ভোগান্তি সহ্য করিয়াছেন। মানিক মিয়াকেও বহু বাধা, বহু বিড়ম্বনা পার করিতে হইয়াছে; কিন্তু আজকের অর্থনৈতিক, বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মানিক মিয়া আজ নাই। তাহার মৃত্যুর পর দেশ স্বাধীন হইয়াছে; কিন্তু আজকের দিনে লিখিতে বসিয়া আমরা অনুধাবন করি, ১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে কি মানিক মিয়া বাঁচিয়া থাকিতে পারিতেন? অথবা বাঁচিয়া থাকিলে এই বাংলাদেশকে তিনি সহ্য করিতে পারিতেন? আমরা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে মানিক মিয়ার যুগ ও পরবর্তী যুগের মধ্যে আকাশ আর পাতালসম ব্যবধান দেখিতে পাই।