গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল কি প্রত্যাশিত ছিল? আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি অংশ না নেওয়া সত্ত্বেও গাজীপুরের মতো জায়গায় নৌকা মার্কা নিয়ে ভোটের মাঠ থেকে হেরে বিদায় নিতে হবে, এটা নিশ্চয়ই কারও ভাবনার মধ্যে ছিল না। আওয়ামী লীগের তো নয়ই। কারণ গাজীপুরকে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয়। পচা শামুকে পা কাটে বলে যে কথাটা চালু আছে গাজীপুরে তার প্রমাণ পাওয়া গেলো।
ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ এক গৃহবধূ জায়েদা খাতুন। ক্ষমতাসীন দলের সর্বাত্মক সমর্থন পেয়েও আজমত উল্লার মতো শক্তিশালী একজন প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কাছে হেরে যাবেন, তা অনেকে ধারণাই করতে পারেননি। রাজনীতি তো দূরের কথা, কোনো দিন সভা-সমাবেশ কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানেও যাকে অংশ নিতে দেখা যায়নি- সেই গৃহবধূই ইতিহাস সৃষ্টি করে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পনগরীর মেয়র নির্বাচিত হয়ে এখন দেশের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছেন।
নিজের গুণে নয়, ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের প্রক্সি প্রার্থী হয়ে এমন জয় পেয়ে জায়েদা খাতুন যে চমক সৃষ্টি করলেন তা আমাদের দেশের রাজনীতির জন্য কোনো শুভ বার্তা বয়ে আনলো কি? একটি সিটি করপোরেশনের মেয়র হতে গেলে যেসব অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন তার একটিও না থাকা সত্ত্বেও তাকে যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলেন, তারা খুব বিবেচনাবোধের পরিচয় দিয়েছেন কি? বলা হচ্ছে, এই জয়ের পেছনে সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলমের ভোট কৌশলকেই প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। কেউ কেউ জায়েদা খাতুনের এই সাফল্যকে ‘জাহাঙ্গীর ম্যাজিক’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
জাহাঙ্গীর আলম কে? গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হন। একই সময় আওয়ামী লীগ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। চলতি বছরই সাধারণ ক্ষমায় আবার দলে ফেরেন। কিন্তু মেয়র পদে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আবার আজীবনের জন্য বহিষ্কার হন আওয়ামী লীগ থেকে। ঋণখেলাপির কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। ভোট করতে পারবেন না- এই আশঙ্কায় মা জায়েদা খাতুনকেও প্রার্থী করেন জাহাঙ্গীর। পুরো নির্বাচনী প্রচারে ছেলের ছায়া হয়েছিলেন জায়েদা।