বিগত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির এই উন্নতি এসেছে মূলত কৃষি উৎপাদনে সরকারের সরাসরি ভূমিকা, কর আদায় বাড়িয়ে প্রচুর অবকাঠামো নির্মাণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিপুল পরিমাণ খরচের কারণে। অর্থনৈতিক উন্নতির ফলে অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে; সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছেছে, যা অনেক বাড়িয়েছে অর্থপ্রবাহ; অর্থনীতির চলকগুলোকে করেছে গতিশীল। এ চলকগুলোর গতি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়েছে যোগাযোগ এবং অধিকতর মানুষের ব্যাংকিং চ্যানেলে অন্তর্ভুক্তি– ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংকিং। অধিক অর্থপ্রবাহের ফলে অনেক কম সময়ের মধ্যে কমে এসেছে দারিদ্র্য। অতিদারিদ্র্য কমেছে সবচেয়ে বেশি। সব সামাজিক সূচকে দারুণভাবে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের সাফল্য সবার চেয়ে বেশি। এই সাফল্য এসেছে সাধারণ মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত মমতা এবং তাঁর দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব থেকে। তবে দেশে যে পরিমাণ অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে; সুষ্ঠুভাবে তার বণ্টন হয়নি। সে কারণে দেখতে পাই, সমাজের সর্বস্তরে আর্থিক উন্নতি হলেও আয় এবং সম্পদে বৈষম্য বেড়েছে। এখন আমাদের সময় হয়েছে একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি আরও বাড়িয়ে বৈষম্য কমিয়ে আনার। কথাটা বলা অনেক সহজ, করাটা তত নয়। তবে যত কঠিনই হোক না কেন, উচ্চ গতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বৈষম্য কমানো অসম্ভব নয়।
অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টিতে বেশি ভূমিকা রাখে মুদ্রাস্ফীতি। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার ডামাডোলে কিছু দুর্বৃত্ত মানসিকতার ব্যাংক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। এসব সিন্ডিকেটের লোকজনকে সরকার তাৎক্ষণিক শক্ত হাতে দমন করতে পারেনি। ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট পেয়েছে কম আয়ের মানুষ। আমদানীকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা করে তার ওপর শুল্ক এবং অন্যান্য কর একেবারে কমিয়ে দিয়ে, একই সঙ্গে প্রণোদনা দিয়ে ওসব পণ্যের দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা এই বাজেটের মাধ্যমেই করা যায়। তা করা হলে ভবিষ্যতে এ রকম সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা কমিয়ে ফেলা যাবে। ইউক্রেন যুদ্ধে আমাদের অনেক শিক্ষা হয়েছে। আমদানিনির্ভরতা একেবারে কমিয়ে ফেলতে হবে। বাড়াতে হবে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন। জ্বলানি তেলের বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার এখনই সময়।