বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য ও সংগীতে যেমন ছিলো অবাধ বিচরণ ঠিক তেমনি সাংবাদিকতা ও পত্রিকার সম্পাদনাতেও তিনি ছিলেন অগ্রগামী। মূলত সমকালীন রাজনীতি সচেতনতা থেকেই তিনি সাংবাদিকতায় এসেছিলেন যা তাঁর লেখা সাহিত্য ও সম্পাদকীয়তে প্রকাশ পায়। তিনি তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শকে জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই সাংবাদিকতা করেছিলেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকাগুলোতে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যে বিদ্রোহী সত্ত্বার পরিচয় আমরা নজরুলের লেখায় পাই সেটা তাঁর সাংবাদিক জীবনেও প্রবল ছিলো। তাঁর সকল সাহিত্য ও শিল্পকর্মেও রাজনৈতিক মননেরও বাঙালি জাতীয়তা বোধের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
গবেষক ড. ইসরাইল খান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “নজরুলের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যসাধনার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো রাজনীতি করা। তাই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি কখনও বিচ্যুত হননি। রাজনীতির মাধ্যমে তিনি সমাজ পরিবর্তন, উন্নয়ন ও নবজাগরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন। নজরুল যখন ‘নবযুগ’ প্রকাশের ইচ্ছে ব্যক্ত করলেন তখন রাজনীতি করবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে মুজফফ্র আহমদকে বলেছিলেন, তাই যদি না করি তবে ফৌজে গিয়েছিলাম কিসের জন্য? রাজনীতি করবো তবে সাহিত্যের মাধ্যমে। তাই মুজফফ্র আহমদ তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘তিনি করতে চাইলেন রাজনীতিক সাহিত্য।’”
অবিভক্ত বাংলার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলের সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পত্রিকা নবযুগ, ধুমকেতু, লাঙল (পরবর্তীকালে গণবাণী নামে প্রকাশিত)। পত্রিকাগুলো বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে রয়েছে। সাহিত্য, সমকালীন রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মুখপত্র হয়ে উঠেছিলো কাজী নজরুল সম্পাদিত পত্রিকাগুলো। এছাড়াও সাংবাদিক হিসেবে চাকরী করেছেন গণবাণী, সেবক, সওগাত ও নবযুগ-এ (১৯৪১)।