বাংলাদেশের বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব রাশেদ খান মেনন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য। তার ৮০তম জন্মদিন সামনে রেখে রাজনীতি, বামপন্থা, জোট রাজনীতি, আগামী নির্বাচন, বর্তমান সরকারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : প্রায় ছয় দশকের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন আপনার। পেছন ফিরে তাকালে এই অভিজ্ঞতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রাশেদ খান মেনন : দেখেন এই ছয় দশক বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছি। সময়টা আমার সংগ্রাম, আন্দোলন, সংগঠনের সময়; এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিজয় অর্জিত হয়েছে আবার বিজয় হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। একজন অত্যন্ত উৎসুক রাজনীতিবিদ হিসেবে এই দুটি বিষয়ই আমি উপভোগ করেছি। এই সমস্ত সময়কালের যতই বাধা থাক না কেন, সেগুলোকে আমি অতিক্রম করেই এসেছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমি কয়েকটি বড় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তারমধ্যে একটা হলো ষাটের দশকের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, যেটা আরও বিস্তৃত রূপ নেয় ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে। এর মধ্য দিয়েই কার্যত আমি রাজনীতির সামনের কাতারে চলে আসি। এবং সমস্ত ষাটের দশক জুড়েই ছাত্র আন্দোলনের যে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রয়েছে তার সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। দ্বিতীয়ত, আমি এদেশের মানুষের স্বাধীনতা এবং মুক্তির যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। একজন মানুষের জীবনে হাজার বছরে এ ধরনের একটা সুযোগ বিরল। সেই মুক্তিযুদ্ধের মতোন একটি মহান ঘটনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছি। এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে ছিলাম এবং আছি। তৃতীয়ত, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে দেড় দশকব্যাপী যে সামরিক শাসনের দাপট এদেশের মানুষকে দেখতে হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যে লড়াই, বলতে পারেন যে আশির দশকজুড়ে যে লড়াই সেই লড়াইয়ের সামনের কাতারে আমি ছিলাম। এবং তিন জোটের রূপরেখায় নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের যে ঐতিহাসিক পরিবর্তন সূচিত হয় তার সঙ্গে আমার সরাসরি সম্পর্ক ছিল। তিন জোটের ঘোষণা রচনা, আন্দোলন রচনা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন এর সবটার সঙ্গেই আমি যুক্ত ছিলাম। তারই পরিণতিতে আমরা সংসদে দ্বাদশ সংশোধনী পাস করি। যেখানে আমি সেই কমিটির সদস্য ছিলাম। এই দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আবার সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় প্রত্যাবর্তন করে। সুতরাং এই ছয় দশকের আমার রাজনৈতিক পরিক্রমা জয়-পরাজয়সহ আমি উপভোগ করেছি। কেবল উপভোগ করেছি তা-ই নয়; বরং আমি মনে করি আমার যতখানি দেওয়ার আমি ততখানিই দিতে চেষ্টা করেছি।