বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কখন কোথায় আঘাত হানে, তা নিয়ে দেশজুড়ে চলতে থাকা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে লিখতে বসে পড়েছি ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে। লোডশেডিং পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছিল তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি খারাপ। বিদ্যুৎঘাটতি হলে গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকদের বঞ্চিত করে শহরাঞ্চলে তথা ‘গ্রোথ সেন্টারগুলোয়’ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার একটা চেষ্টা বরাবরই নিয়ে থাকে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এর পক্ষে যুক্তিও আছে। উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য যেখানে কেন্দ্রীভূত, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা গেলে অর্থনীতিতে এর রিটার্ন পাওয়া যায় বেশি। কৃষি ও গ্রামাঞ্চলের অকৃষি খাত সচল রাখাটাও খাদ্যনিরাপত্তাসহ আয়বৈষম্য কমিয়ে রাখার জন্য জরুরি। সেচের বেলায় বিদ্যুতের বিকল্প হলো ডিজেল। এর দাম তো অনেক বাড়ানো হয়েছে। সব রকম সারের দামও বাড়ানো হয়েছে দুই দফায়। তাতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে।
যা-ই হোক, এই মুহূর্তে দেশজুড়ে চলছে এসএসসি পরীক্ষা। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছিল, তাতে এই পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিশ্চয়ই ব্যাহত হয়েছে। মানুষ বিদ্যুতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে মুশকিল। চট করে কোনো বিকল্প ব্যবস্থায় চলে যাওয়া তার পক্ষে তখন কঠিন হয়ে পড়ে। মাঝে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির বড় উন্নতি হয়েছিল। শহরাঞ্চলের মানুষ লোডশেডিংয়ের কথা ভুলেই গিয়েছিল প্রায়। সেদিনগুলো কিছুটা হলেও ফিরে আসতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সরবরাহ পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায়।
এই মুহূর্তে যে লোডশেডিংয়ে বসে নিবন্ধটি তৈরি করছি, তার কারণ অবশ্য ভিন্ন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাড়তি এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে যে দুটি এলএনজি টার্মিনাল আমদানি করা এই গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের কাজটি করত, সেগুলোকে গ্যাসলাইন থেকে বিযুক্ত করে নিরাপদ সমুদ্র অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রক্রিয়াকরণের জন্য এলএনজি হাতে থাকলেও তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে বাসাবাড়িসহ জরুরি ক্ষেত্রে কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহ ও চাপ।