ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উপকূলজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা বিবেচনায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারিভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও মানুষকে সচেতন করার জন্য নানা রকম উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। উদ্বেগজনক হলো, মানুষকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার এতরকম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার পরও সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। বোরবার যখন এ সম্পাদকীয় লেখা হচ্ছে, তখনও বহু মানুষের ঝুঁকি নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করার খবর পাওয়া গেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারও কারও অভিযোগ, বাড়ির আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। বস্তুত অসচেতনতার কারণেই মানুষ এতটা ঝুঁকি নিচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার জন্য আরও ব্যাপক পরিসরে উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে সামুদ্রিক ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আগের তুলনায় কমেছে। ঝড়ের পর ছেঁড়া বিদ্যুতের তার বিদ্যুৎকর্মী ছাড়া অন্য কারও দ্বারা অপসারণ না করানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য আরও ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, কক্সবাজারে বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩২ কিলোমিটার অরক্ষিত। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করার জন্য বড় পরিসরে উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শুকনা খাবারের পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন ইত্যাদি জরুরি উপাদানের পর্যাপ্ত সরবরাহ যতদিন প্রয়োজন, অব্যাহত রাখা উচিত। সরকারি ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি প্রয়োজন বেসরকারি উদ্যোগও। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রেরণ এবং তাদের পুনর্বাসনের বিকল্প নেই। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ দূষিত পানি পান করতে পারে। এতে পানিবাহিত নানা রকম রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বহু মানুষ আছেন যারা ঋণ করে গবাদিপশু পালন করেন। কাজেই মোখার আঘাতের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষ যাতে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে না পড়ে, সেজন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। ত্রাণ বিতরণে যাতে কোনোরকম অনিয়ম না ঘটে, কর্তৃপক্ষকে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।