ঘূর্ণিঝড় মোকা অবশেষে রোববার বিকেলে কক্সবাজারের উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে চলে গেছে। কয়েক দিন এ দুর্যোগ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি আমরা দেখেছি। যেভাবে ভাবছিলাম, এটি ‘সুপার সাইক্লোন’ হবে; সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আমি মনে করি, ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতিই জরুরি। এ ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে কক্সবাজারের উখিয়া, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখানো হয়। সে জন্য কক্সবাজারের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহা-বিপৎসংকেতের আওতায় ছিল। এ ছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোর বিপৎসংকেত ছিল ৮। ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ বাংলাদেশে আঘাত না হানায় বাতাসের গতিবেগও কম ছিল। সেন্টমার্টিনে ১৪৭ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়। আবার জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতাও সেই অনুপাতে আমরা দেখেছি। অর্থাৎ যেখানে ১০-১২ ফুট উচ্চতার কথা বলা হয়, সেখানে জলোচ্ছ্বাস ৩-৪ ফুট ওঠে। বিষয়টি আমাদের জন্য স্বস্তির নিঃসন্দেহে।
রোববার সন্ধ্যায়ই ঘূর্ণিঝড়টি বলা চলে দুর্বল হয়ে যায় এবং সে পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র সংবাদমাধ্যমে আসে। বাংলাদেশে হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও মিয়ানমারে তিনজনের মৃত্যুর খবর আমরা দেখেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হবে। তবে স্পষ্টতই কোনো প্রাণ যাতে না ঝরে, সে ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট ছিল। উপকূলীয় মানুষ যাতে যথাসময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়, সে জন্য আগে থেকেই প্রচার চালানো হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার অংশ হিসেবে সাড়ে ৭ লাখের মতো মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে আমরা দেখেছি। মহা-বিপৎসংকেত দেওয়ার পর বিজিবি, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কক্সবাজারের পর্যটকসহ সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কক্সবাজারে হওয়ায় তারাও ঝুঁকির মধ্যে ছিলে। তাদের সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রস্তুতি হিসেবে রোহিঙ্গা শিবিরে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবককে বন্যা, পাহাড়ধস মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানকার দুর্গম এলাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে তিনটি ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক এবং নারী-শিশুসহ বেশি বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি সেবা দিতে ভ্রাম্যমাণ ইউনিট স্থাপন করা হয়।