ছোটদের লেখালেখি বা শিশুসাহিত্যের জন্যে জগতের সবচেয়ে মূল্যবান পুরস্কার অস্ট্রিদ লিন্ডগ্রেন স্মৃতি পুরস্কার বা সংক্ষেপে আলমা পুরস্কার। সুইডিশ কর্তৃপক্ষ এই শতকের গোড়ার দিকে পুরস্কারটি প্রবর্তন করে দেশটিতে শিশুসাহিত্যের সবথেকে অগ্রগণ্য প্রতিভা অস্ট্রিদ লিন্ডগ্রেনের নামে। এই পুরস্কারটিকে মনে করা হয় শিশুসাহিত্যে ‘নোবেল পুরস্কার’। পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সমান।
সারা দুনিয়ার শিশুসাহিত্যের লেখক, চিত্রশিল্পী এবং শিশুদের মাঝে পঠন প্রসারে ভূমিকা পালনকারী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবার সুযোগ রয়েছে। গত প্রায় দুই যুগের ইতিহাসে এশিয়া মহাদেশ থেকে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া এই পুরস্কার পেয়েছে।
চলতি বছরে এই পুরস্কার গ্রহণ করছেন মার্কিন শিশুসাহিত্যিক লরি হ্যালস অ্যান্ডারসন (Laurie Halse Anderson)। গত ২ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্টকহোম কনসার্ট হলে সারা দুনিয়া থেকে আমন্ত্রিত অর্ধসহস্র অতিথির উপস্থিতিতে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্তোরিয়ার হাত থেকে তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে দেশটির সংস্কৃতিমন্ত্রী পারিসা লিলিস্ট্রান্ডও উপস্থিত ছিলেন। একই অনুষ্ঠান থেকে পাঁচদিনব্যাপী নবম বিশ্ব সংস্কৃতি বা কলা সম্মেলন বা আর্ট সামিট ২০২৩ উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশসহ দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে চার শতাধিক প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
সংস্কৃতির এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন চলার সময়ে এবং শিশুসাহিত্যে নোবেল পুরস্কারসম এই পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে দেশে দেশে ছোটদের বইয়ে শব্দ কল্প গল্প ছবি নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে চাই।
শিশুসাহিত্যের ইতিহাস ছয় হাজার বছর মনে করা হয়। এমনকি ভারতবর্ষেই শিশুসাহিত্যের শুরু চার হাজার বছর আগে। তবে ধারণা করা যায় মানুষের আবির্ভাবের শুরু এবং মনের ভাব-ভঙ্গি প্রকাশ ও ভাষার বিকাশের সঙ্গে গল্প বলার চল ছিল, লিখিত সাহিত্যের ইতিহাসে যাই বলা থাক। আর এই গল্প বলার চলে শিশুরা নিশ্চয়ই উপেক্ষিত ছিল না। আর কেউ না বলুক, শিশুর সঙ্গে মায়ের কল্পকথা গল্পগাঁথা নিঃসন্দেহে ছিল। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে শিশুসাহিত্যের ইতিহাস যে সুদূর আদিকাল থেকেই, তা ধারণার মধ্যে রাখতে দোষের কিছু কী আছে?
প্রাচীনকালে ভারতবর্ষসহ মিশর, আসিরিয়া-ব্যাবিলনিয়া, গ্রিস ছাড়াও জগতের নানা ভূপ্রান্তে শিশুসাহিত্যের হদিস পাওয়া যায়। এই সময়টায় পাথর, মাটির ফলক, প্যাপিরাসের ওপর শিশুসাহিত্য লেখা হতো। লেখার উপজীব্য থাকত রূপকথা, ইতিহাস এবং জীবনী আর কাঠামো হিসেবে বেছে নেয়া হতো গদ্য আর পদ্য।