এবারের রমজান মাসের শেষ ১৫ দিনে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের (প্রবাসী আয়) প্রবাহ অনেকখানি স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি বিদেশে যাচ্ছেন বলে সরকারি সূত্রে আমরা জানতে পারছি। কিন্তু ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির হার ডলারের হিসাবে মাত্র ৫ শতাংশ। এর মানে, সিংহভাগ প্রবাসীই হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
ব্যাংকগুলোর প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা হচ্ছে, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে এক ডলারের বিনিময়ে ১০৭ টাকার বেশি দেওয়া যাবে না। অথচ সম্প্রতি কার্ব মার্কেটে এক ডলারের দাম উঠেছে ১২০ টাকা পর্যন্ত। ফলে প্রবাসীদের কাছে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো অনেক বেশি আকর্ষণীয় এখন। অতএব, হুন্ডির তুলনায় বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ক্রমেই দুর্বল হতে বাধ্য। এর প্রত্যক্ষ ফলাফল হলো, দেশের এ বছরের বাণিজ্যঘাটতি কমানো হয়তো অধরা থেকে যাবে এবং ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতিও ২০২৩ সালের জুনের শেষে বিপজ্জনক পর্যায়েই থেকে যাবে। ফলে দেশের ডলার–সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট অদূর ভবিষ্যতে কাটানো যাবে না।
আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণের সময় আমরা ২০২৩ সালের জুন মাসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভকে বাড়িয়ে আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি মোতাবেক ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও মনে হচ্ছে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে নয়। (বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদ্ধতি অনুসারে দেশের বর্তমান রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি হলেও আইএমএফের হিসাবপদ্ধতিতে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের কম)।
২০২০-২১ অর্থবছরে বৈধ পথে দেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, রিজার্ভও পৌঁছে গিয়েছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। এই স্ফীতির প্রধান কারণ করোনা মহামারির সময় হুন্ডি ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় পরের অর্থবছরে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো আবার চাঙা হয়ে ওঠে। তখন বৈধ পথে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। অন্যদিকে মহামারির পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার হওয়ায় ২০২১-২২ সালে দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে ৮২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল, ব্যাপক ওভার-ইনভয়েসিং হওয়ায় আমদানিতে এই উল্লম্ফন ঘটেছিল বলেও ধারণা করা হয়। তখন থেকেই আমি হুন্ডি ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে দমন করার কথা বলে আসছি।