বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, আমাদের জনপ্রতি বার্ষিক আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ১৯৭১ সালে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ১২৮ মার্কিন ডলার। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, জনবিস্ফোরণ, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বহুবিধ নেতিবাচক বিষয় থাকা সত্ত্বেও এই প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক।
স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারের ধারাবাহিক কার্যক্রম ও অদম্য জনগণের জীবনজয়ী সংগ্রামই এই কৃতিত্বের দাবিদার। পাশাপাশি রয়েছে উন্নয়ন সহযোগীদের বিভিন্ন প্রয়াস। দেশের উদ্যোক্তা শ্রেণির অব্যাহত প্রচেষ্টাও বিষয়টিকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়ক ছিল।
এখন গড়পড়তা ৬ থেকে ৭ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দেশের জনগণের আয়কে ক্রমান্বয়ে ওপরের দিকে নিয়ে যাবে, এমনটাই আশা করা যায়। আরও আশা করা যায়, এ প্রবৃদ্ধি আপামর জনগণের জীবনযাত্রার মানও ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবে। সেটা করছেও; তবে অনেকটা ধীর লয়ে। আর ধীর লয়ে যাদের আয় বাড়ছে, তারা সমাজের কম আয় ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। অবশ্য স্বাধীনতার সময়কার তুলনায় দারিদ্র্যের সীমা কমেছে অনেক।
দারিদ্র্যের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ৯০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ কিংবা আরও নেমেছে এখন। তবে বিপজ্জনক দিক হলো, আয়বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, নিম্ন আয়ের ৪০ শতাংশের আওতায় রয়েছে আয়ের ২১ শতাংশ। অন্যদিকে উঁচু আয়ের ১০ শতাংশের আওতায় তা ২৭ শতাংশ।
এ আয়বৈষম্য দূর করার অন্যতম প্রক্রিয়া করের মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানদের আয় থেকে টাকা নিয়ে কম আয়ের লোকদের জন্য কল্যাণমুখী কার্যক্রম। এ ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কর জিডিপির অনুপাত ১১.৭২ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এটা ৮ শতাংশেরও নিচে। পক্ষান্তরে ভারতে ১১ শতাংশের মতো। কিন্তু ভারতের মাথাপিছু গড় আয় ২ হাজার ৩০০ ডলার।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের সমাজের একটি অংশের আয়ের স্ফীতি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের জীবনযাত্রা বিলাসবহুল। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের কথাও জানা যায়। আইনের শাসন কার্যকর প্রয়োগ এখানে অনেকটা অনুপস্থিত। ধনিক শ্রেণির একটি অংশ যথোপযুক্ত কর দেন না। আয়করের ধাপগুলোও বিত্তবানদের পক্ষে। অন্যদিকে সরকারি–বেসরকারি ছোট–বড় চাকরিজীবীসহ যঁাদের আয় সরকারের হিসাবের খাতায় আছে, তঁাদের আয়কর দিতে হয় কড়ায়-গন্ডায়। ভোক্তা জনগণ ভ্যাট দিয়ে যাচ্ছে মুখ বুজে। অথচ সরকারি হিসাবে যায় এর কম অংশই। এভাবে সমাজে দিন দিন প্রকট হচ্ছে আয়বৈষম্য।