আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন ১৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৬ ওভারে ৮৯/২ (লক্ষ্য ১৩৮)
জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ
দ্রুত সময়ের মধ্যে দুই উইকেট হারানোর পর পাল্টা আক্রমণের পথে হেঁটে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন তামিম ইকবাল। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছে বাংলাদেশ।
১৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৮৯ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন আর ৪৯ রান। মুশফিক ৫ চারে ১৯ বলে ২৯ ও তামিম ২ চারে ৪৮ বলে ২৪ রানে অপরাজিত।
দিনের শুরুতে স্রেফ ৬ রানের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের বাকি দুই উইকেট নিয়ে ১৩৮ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গায় ওপেনিংয়ে নামেন লিটন কুমার দাস। প্রথম দুই বলে ছক্কা-চারে ইনিংস শুরু করেন তিনি। তবে অদ্ভুতভাবে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন ১৯ বলে ২৩ রান করে।
তিনে নেমে টিকতে পারেননি শান্ত। তৃতীয় আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে ৪ রান করে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৪৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের আভাস দেন মুশফিক। বিরতির আগপর্যন্ত একই অভিপ্রায়ে খেলে যান তিনি। স্কয়ার কাট, কভার ড্রাইভ, সুইপ, রিভার্স সুইপে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান।
অন্য প্রান্তে তামিম খেলেছেন রয়েসয়ে। মুশফিকের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এসেছে ৪৯ বলে ৪৬ রান।
টিকলেন না শান্ত
ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকেই অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত ফিরলেন এই অফ স্পিনারের বলেই।
ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে আরও বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি দ্বিধা নিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন শান্ত। বল তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে জমা পড়ে স্লিপে থাকা অ্যান্ড্রু বালবার্নির হাতে।
আইরিশ অধিনায়ক ক্যাচটি পরিষ্কারভাবে নিয়েছেন কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল আম্পায়ারদের। সফট সিগনাল 'নট আউট' দিয়ে তারা এই সিদ্ধান্ত পাঠান থার্ড আম্পায়ারের কাছে।
বেশ লম্বা সময় ধরে রিপ্লে দেখে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে দেন থার্ড আম্পায়ার। প্রথম ইনিংসে খালি হাতে ফেরা শান্ত এবার করেন ১ চারে ৯ বলে ৪ রান।
শান্তর বিদায়ে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভে চার মারেন মুশফিকুর রহিম।
৮ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪৭ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৯১ রান। তামিম ইকবাল অপরাজিত ১১ রানে।
লিটনের ইনিংসের অদ্ভুত সমাপ্তি
মার্ক অ্যাডায়ারের বাউন্সারে পুল করেছিলেন লিটন দাস। ব্যাটে-বলে হয়েছে ভেবেই হয়তো ব্রডকাস্টের ক্যামেরা চলে যায় স্কয়ার লেগের দিকে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সেটির আবার ফিরতে হয় ক্রিজে। কারণ বল যে লেগেছে অফ স্টাম্পে!
পুল করলেও লিটনের ব্যাটে লাগেনি বল। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে প্রথমে লাগে তার হেলমেটে। পরে বাহুতে লেগে পড়ে ব্যাটের ওপর। ব্যাট থেকে সেটি গিয়ে আঘাত করে অফ স্টাম্পে। এমন অদ্ভুভাবেই শেষ হলো লিটনের ইনিংস।
দীর্ঘ দিন পর ইনিংস সূচনা করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন লিটন। প্রথম দুই বলে মারেন ছয় ও চার। আউট হওয়ার এক বল আগেও দারুণ লফটেড ড্রাইভে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে চার মারেন তিনি।
কিন্তু অদ্ভুত বোল্ডে লিটনের নান্দনিক ইনিংসটি বড় হলো না। ১৯ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৩ রান। নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৩২ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন আর ১০৬ রান। তামিম ইকবাল খেলছেন ৮ রানে।
ছক্কা-চারে শুরু লিটনের
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ওপেনিংয়ে নামলেও লিটন কুমার দাসের ব্যাটিংয়ে নেই কোনো জড়তা। ছক্কা-চারে শুরু করেছেন নিজের ইনিংস। সেটিও আবার প্রথম ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের সেরা বোলার অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের বলে।
দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক পান লিটন। ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্প লাইনের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে লং অন দিয়ে ছক্কা মারেন কিপার-ব্যাটসম্যান। পরের বলে স্কয়ার কাটে চার মারেন পয়েন্টের সামনে দিয়ে।
এর আগে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে কভার ড্রাইভে চার মেরে দলের রানের খাতা খোলেন তামিম ইকবাল।
তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে লিটন
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংস সূচনা করেছিলেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে শান্তর জায়গায় নামলেন লিটন কুমার দাস।
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে নামলেন তিনি। সবশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেন করেন লিটন।
কিপার হিসেবে খেলা ম্যাচে এর আগে স্রেফ একবারই ইনিংস সূচনা করেন তিনি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রুম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে নেমেছিলেন তিনি।
সব মিলিয়ে এর আগে দশবার ওপেনিংয়ে নামেন লিটন। তবে তার পরিসংখ্যান তেমন ভালো নয়। দশ ইনিংসে করেছেন মোট ১৫৩ রান। নেই কোনো ফিফটি। সর্বোচ্চ ৩৩ রান।
লেজ মুড়িয়ে দিলেন ইবাদত, লক্ষ্য ১৩৮
অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের পর গ্রাহাম হিউমকেও আউট করলেন ইবাদত হোসেন। আগের দিনের স্কোরের সঙ্গে আর ৬ রান যোগ করতেই অলআউট আয়ারল্যান্ড।
ইবাদতের অফ স্টাম্পের বাইরের বল বেশ দূর থেকে অফ সাইডে খেলার চেষ্টা করেন হিউম। বল তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে জমা পড়ে লিটন দাসের গ্লাভসে।
৫৫ বলে ১৪ রান করেছেন হিউম। দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ড অলআউট ২৯২ রানে। জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য ১৩৮।
চতুর্থ দিন সকালে সব মিলিয়ে ৯ ওভার খেলেছে আয়ারল্যান্ড। দিনের পঞ্চম ওভারে ম্যাকব্রাইনকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রুও দেন ইবাদত।
ইবাদতের শিকার মোট ৩ উইকেট। তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ৪টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৬৯
আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৮৬/৮) ১১৬ ওভারে ২৯২ (ম্যাকব্রাইন ৭২, হিউম ১৪* হোয়াইট ০; সাকিব ১৩-৪-২৬-২, তাইজুল ৪২-১৬-৯০-৪, মিরাজ ৩০-৮-৫৮-০, ইবাদত ১৫-৩-৩৭-১, শরিফুল ৮-১-৩৫-১, খালেদ ৭-২-৩৮-০)
ইবাদতের বলে উড়ল ম্যাকব্রাইনের স্টাম্প
দিনের পঞ্চম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই ব্রেক থ্রু এনে দিলেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি। ওভারের দ্বিতীয় বলে উড়িয়ে দিলেন অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্প।
ইবাদতের অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ ডেলিভারি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছিলেন ম্যাকব্রাইন। বল তার ব্যাটের বাইরের কানা ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। ভাঙে ৭৭ বল স্থায়ী ২৪ রানের জুটি।
ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করা ম্যাকব্রাইন করেছেন ৭২ রান। ১৫৬ বলের ইনিংস সাজিয়েছেন ৮ চার ও ১ ছক্কায়।
১১২ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২৮৯ রান। তাদের লিড ১৩৪। উইকেটে দুই ব্যাটসম্যান গ্রাহাম হিউম ও বেন হোয়াইট।
তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচ যেখানে দাঁড়িয়ে
বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে স্বপ্নময় এক দিন কাটানো আয়ারল্যান্ড এখন জয়ের কথাও ভাবতে পারছে। এক সময়ে ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানোই ছিল তাদের জন্য অনেক দূরের পথ। লরকান টাকারের সেঞ্চুরি এবং হ্যারি টেক্টর ও অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের ফিফটিতে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দেওয়ার পথে রয়েছে সফরকারীরা।
আগের দিন শেষ বেলায় ১৭ ওভার বোলিং করে ৪ উইকেট নিয়েছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন ৯০ ওভার বোলিং করে স্বাগতিকরা নিতে পেরেছে কেবল কেবল চার উইকেট!
তৃতীয় দিন শেষে সফরকারীদের রান ৮ উইকেটে ২৮৬।
বল হাতে বাংলাদেশকে ভোগানো অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন খেলছেন ৭১ রানে। তার ১৪৪ রানের চমৎকার ইনিংস গড়া আর চার ও এক ছক্কায়। গ্রাহাম হিউম ব্যাট করছেন ৯ রানে। অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেটে তারা ৫১ বলে গড়েছেন ২১ রানের জুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে):
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৬৯
আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৭/৪) ১০৭ ওভারে ২৮৬/৮ (টেক্টর ৫৬, মুর ১৬, টাকার ১০৮, ম্যাকব্রাইন ৭০*, অ্যাডায়ার ১৩, হিউম ৯*; সাকিব ১৩-৪-২৬-২, তাইজুল ৩৮-১৫-৮৬-৪, মিরাজ ২৭-৬-৫৭-০, ইবাদত ১২-১-৩৬-১, শরিফুল ৮-১-৩৫-১, খালেদ ৭-২-৩৮-০)