সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন। এটি বহুল প্রতীক্ষিত ছিল; কারণ ২০১৬-১৭ সালের পর দীর্ঘ বিরতিতে হয়েছে এই জরিপ এবং এই সময়ে শ্রমবাজারে কী ঘটেছে তা জানার জন্য শুধু যে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ছিল তাই নয়, নীতিমালা প্রণয়নের জন্যও এ ধরনের জরিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যা প্রকাশিত হয়েছে তা একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন; যাতে অল্প কয়েকটি বিষয়ে উপাত্ত পরিবেশিত হয়েছে। বিস্তারিত উপাত্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য এই প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কয়েকটি কথা বলা যায়।
উপরোক্ত জরিপের উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ সালের তুলনায় বেকারত্বের হার কমেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে ইতিবাচক এবং সাফল্যের নির্দেশক বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এটিকে সুসংবাদ বলে মনে করা যায় না; কারণ বেকারত্বের যে সংজ্ঞা ব্যবহার করা হয়েছে (যদিও তা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও কর্তৃক স্বীকৃত এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত) এবং জরিপে যেভাবে বেকার চিহ্নিত করা হয়, তা থেকে বাংলাদেশের মতো দেশের শ্রমবাজারের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। এ সংজ্ঞায় জরিপের আগের সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ করেননি কিন্তু কাজ করতে ইচ্ছুক এবং সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছিলেন– এই তিন শর্ত পালন করলেই একজনকে বেকার বলে গণ্য করা হয়।
যেসব দেশে বেকারদের জন্য কোনো ভাতা বা সহায়তা নেই এবং তাদের একটা বড় সংখ্যা দরিদ্র, সেসব দেশে সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ করেননি এ রকম মানুষের সংখ্যা কম হওয়ারই কথা। বস্তুত বাংলাদেশে প্রায় সব শ্রমশক্তি জরিপেই বেকারত্বের হার দেখা গেছে চার শতাংশের আশপাশে। এই যদি শ্রমবাজারের প্রকৃত চিত্র হয় তাহলে তা উন্নত-অনুন্নত অনেক দেশের জন্যই ঈর্ষার কারণ হবে।
প্রকৃত অবস্থা এই যে, ভালো কাজের অভাবে এবং অনেক সময় আর্থিক অনটনের কারণে অনেকেই কিছু একটা করে সামান্য হলেও উপার্জনের চেষ্টা করেন। এ ধরনের মানুষ হয়তো বেকার হিসেবে চিহ্নিত হন না; কিন্তু তাদের অনেকেই কর্মরত হলেও দরিদ্র। এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাড়ল না কমল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেকারত্বের হার চার শতাংশ না কি তার চেয়ে নিচে নামল, তা থেকে তেমন কোনো উপসংহারে আসা যায় না।
বেকারত্বের উপাত্তের সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশের মতো দেশের শ্রমবাজারের অবস্থা বুঝতে হলে আরও কয়েকটি বিকল্প নির্দেশক ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, (১) ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প, আধুনিক সেবা (যেমন ব্যবসা, ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্য সেবা এবং শিক্ষা, আইন, চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পেশা), পরিবহন এসব খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার; (২) মোট কর্মসংস্থানে আনুষ্ঠানিক খাতের অংশ বাড়ছে কিনা; (৩) মোট কর্মসংস্থানে নিয়মিত বেতনভিত্তিক কাজের অংশ বাড়ছে কিনা; (৪) স্বনিয়োজিত কাজে আয় কেমন। আধুনিক খাতগুলোতে কর্মসংস্থান দ্রুত বাড়লেই কৃষি এবং অন্যান্য গতানুগতিক খাত থেকে উদ্বৃত্ত শ্রমের স্থানান্তরও ত্বরান্বিত হবে।