নকল টিকা ও মহাকাব্যিক অবহেলা

সমকাল ডা. মুশতাক হোসেন প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৩, ০১:৩১

আমাদের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তার কথা বলা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গীকারে ঘাটতির কারণে সেই সুফল নাগরিকরা অনেক সময় পাচ্ছেন না। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ভারত থেকে অবৈধ পথে এনে মজুত করা হতো হেপাটাইটিস-বির আমদানি-নিষিদ্ধ টিকা। পরে একটি ভেঙে ১০টি নকল অ্যাম্পুলে ভরে চলত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা হিসেবে সরবরাহের প্রক্রিয়া। সেগুলোর একেকটি বিক্রি হতো আড়াই হাজার টাকায়। ফলে ৩৫০ টাকায় কেনা একটি নিষিদ্ধ টিকা ভিন্ন নামে বিক্রি করে মেলে ২৫ হাজার টাকা। এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে ভয়ংকর এসব তথ্য।


এসব নকল টিকা অবশ্যই মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যাঁরা এরই মধ্যে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে নকল টিকা নিয়েছেন, তাঁদের সুরক্ষায় সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। নকল টিকা নেওয়া নারীরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারেন। জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জন ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হলেও সঠিক চিকিৎসা নিয়ে নিজেদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হবে।


নকল ওষুধ ও টিকা উৎপাদন এবং বাজারজাতকারীদের শনাক্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার মূল কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। দেশে নকল ও ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে আইন রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে কাজ করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তাদের সহযোগিতা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাঝেমধ্যে বাজার থেকে ওষুধ নিয়ে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা দরকার তা ঠিক আছে কিনা। তবে এ ক্ষেত্রে জনবল সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও এ বিষয়ে তদারকির জন্য বিশেষজ্ঞ নেই। এদিক বিবেচনা করলে বলা যায়, নকল টিকা ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি মহাকাব্যিক অবহেলার শিকার। অথচ নকল ওষুধ ও টিকার সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। কাজেই এ খাতকে অবহেলা করলে এর পরণিতি ভয়াবহ। তাই প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার।


নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে যেমন শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ দরকার; একইভাবে নিরাপদ ওষুধ নিশ্চিতেও শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ জরুরি। এ দুটি খাতে গুরুত্ব না দিলে একদিকে ভেজাল খাওয়া রোগী বাড়াবে; অন্যদিকে নকল ওষুধ বা টিকা রোগীর রোগ নিরাময় না করে উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে দক্ষ জনবল নিশ্চিত করা গেলে তারা নিয়মিত তদারক করতে পারবে। ওষুধের কারখানা থেকে শুরু করে দোকানে নিয়মিত তদারকি চালাতে হবে। হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করে নকলকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়াতে হবে।


সংবাদমাধ্যমে এসব জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হলে আমরা তৎপর হই। দুর্ঘটনার পর সাময়িক তৎপরতা চালিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সুফল আশা করা যায় না। নিয়মিত তদারকি চালাতে হবে। সংবাদমাধ্যমে এসব চক্রের একটি অংশের কথা এসেছে। এ রকম আরও যারা দিনের পর দিন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে; মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করছে, তাদের শনাক্ত করা জরুরি। অনুসন্ধান ও তদন্তের মাধ্যমে এটি বের করে আনা যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হলে এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা কঠিন বিষয় নয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us