চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে নির্মিত একেকটি ভবন শত বছরের বেশি পুরোনো। ভূমিকম্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভবন ধসের ঘটনায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি। ঝুঁকিপূর্ণ এমন অর্ধশতাধিক ভবনে চলছে নিত্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসা। ব্যবসাকেন্দ্রটি শহরের নিতাইগঞ্জের আর কে দাস রোড, বি দাস রোড, ওল্ড ব্যাংক রোড ও শহরের টানবাজারে। ভবনগুলোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
গত শনিবার আর কে দাস রোডের ইলিয়াছ দেওয়ানের মালিকানাধীন পুরোনো একটি দোতলা ভবনে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দুজনের মৃত্যু হয়, আহত হন ৯ জন। বিস্ফোরণে ভবনের তিনটি গদিঘর, বারান্দার ছাদ ও পেছনের অংশ ধসে পড়ে। ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী বলছে ফায়ার সার্ভিস। এই ঘটনার আগেও এই ভবনে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু হয়েছিল।
সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় ওই ভবন ১৫ নম্বরে। ভবনমালিক ইলিয়াছ দেওয়ানের চাচাতো ভাই সালাউদ্দিন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ভবন ভেঙে ফেলতে নোটিশ দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। রাজউক নতুন ভবনের অনুমতি না দেওয়ায় পুরোনো ভবনটি চাইলেও ভাঙতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর আগে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নিতাইগঞ্জে নগরী গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে এখানে ব্যবসাবাণিজ্য গড়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারেরা এখান থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যান। ৩০ থেকে ৪০টি জেলায় এখান থেকে নিত্য পণ্য সরবরাহ হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, নিতাইগঞ্জে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। অধিকাংশ ব্যবসায়ী গদি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালান। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে জরাজীর্ণ ভবনগুলো। ফলে প্রাণভয় নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে তাঁদের।
৩০ বছর ধরে নিতাইগঞ্জের ওল্ড ব্যাংক রোডে নারায়ণগঞ্জ সল্ট ইন্ড্রাস্ট্রিজের গদিঘরের ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করছেন বিপ্লব সরকার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এখানে কাজ করতে এসে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁরা গরিব ও সাধারণ কর্মচারী। ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। তাঁদের কোনো নিরাপত্তা নেই।