রাজকান্দি যেন মাগুরছড়া না হয়

সমকাল পাভেল পার্থ প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২৩, ০০:৩১

রেমা-কালেঙ্গা থেকে রাজকান্দি হয়ে পাথারিয়া। আন্তঃসীমান্ত এই প্রাচীনসমৃদ্ধ বনগুলো নিরাপদে নেই। অগ্নিকাণ্ড কিংবা করপোরেট খননবন্দি অরণ্যের ভবিষ্যৎ। গ্যাস জরিপের নামে ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত লন্ডভন্ড হয়েছিল লাউয়াছড়া বন। অক্সিডেন্টাল, ইউনোকল, শেভরনের মতো দুনিয়া কাঁপানো কোম্পানিরা কাঁপিয়ে দিয়েছিল লাউয়াছড়া বনের নাভিমূল। গ্যাস জরিপের কারণে লাউয়াছড়ার মাগুরছড়ায় ঘটেছিল দেশের সর্ববৃহৎ ‘পরিবেশ-গণহত্যা’।


আমরা ভেবেছিলাম, বনের ভেতর করপোরেট খনন বন্ধ হবে। রাষ্ট্র প্রাকৃতিক বনে এসব অনুমোদন দেবে না। জলবায়ু বিপর্যস্ত দুনিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে বৈশ্বিক তর্ক উঠেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নবায়নযোগ্য সবুজ জ্বালানির সম্ভাবনা দেখছে বিশ্ব। একদিকে পাতানো যুদ্ধ, আরেকদিকে মহামারির দুঃসহ ক্ষত; টালমাটাল দুনিয়া গভীরভাবে প্রাণ-প্রকৃতি আগলে বাঁচার অঙ্গীকার করছে। আর এমনই এক উতল দুনিয়ায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে রাজকান্দির মতো এক প্রাচীন বন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে গ্যাস জরিপের নামে।


জানা যায়, ১৪ নম্বর ব্লকের আওতায় রাজকান্দি রেঞ্জের কুরমা, কামারছড়া ও আদমপুর বনবিট এলাকায় গ্যাস জরিপ শুরু হয়েছে এবং ধাপে ধাপে বিভিন্ন অনুসন্ধানকার্য চালাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম সূত্র জানায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় এই গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম করছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-সিএনপিসি। পেট্টোবাংলার তত্ত্বাবধানে ও সিলেট গ্যাসফিল্ডের নির্দেশনায় এরই মধ্যে চা বাগান, চা শ্রমিক বসতি এবং হাকালুকি হাওরে ত্রিমাত্রিক জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। ত্রিমাত্রিক জরিপের সময় বিস্ফোরণ ও বিকট শব্দে বহু চা শ্রমিকের মাটির ঘরের দেয়াল ফেটে যায়। গ্যাস অনুসন্ধানে এখন বনের ভেতর ড্রিলিং করছে সিএনপিসি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, সংরক্ষিত বনে গ্যাস অনুসন্ধানে সিলেট বন বিভাগের অনাপত্তি থাকলেও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের শর্ত অনুযায়ী অনুমতিসাপেক্ষে এই ড্রিলিং চলছে।


চায়না কোম্পানিটি রাজকান্দি বনে ত্রিমাত্রিক ভূগর্ভস্থ জরিপ করবে। মন্ত্রণালয় তুলনামূলক গাছগাছালিহীন ফাঁকা স্থানে ড্রিলিং করাসহ বনের ভেতর যানবাহন প্রবেশ না করানো, গাছপালা না কাটা, প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম গ্রহণ না করা এবং বনজ সম্পদ ক্ষতি না করার শর্ত দিয়েছে। এর আগে বনের ভেতর অগ্নিকাণ্ড ঘটায় সিএনপিসি রাজকান্দি বনে আগুন লাগার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সংবাদমাধ্যমকে জানায়, তাদের জন্য আগুন লাগেনি এবং তারা এর কারণ অনুসন্ধান করছে।


চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ধাপে গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরু হলে কোম্পানি বনের ভেতর প্রায় ২ হাজার পয়েন্ট চিহ্নিত করে সেখানকার বনতল বিনষ্ট করে গর্ত খনন করে। একটি পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্টের দূরত্ব রাখা হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ মিটার। এসব গর্তে প্লাস্টিক পাইপ ঢুকিয়ে রাসায়নিক বিস্ফোরক ভর্তি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বনের ভেতর বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। বিস্ফোরণের অপেক্ষায় আতঙ্ক আর শঙ্কা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজকান্দি বন।


গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম কোনোভাবেই বনের সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্র এবং খাদ্যশৃঙ্খলকে মর্যাদা দেয় না এবং এর ফলে বহু বুনো প্রাণ নিহত হয়। বিনষ্ট হয় খাদ্য উৎস, প্রজননস্থল ও বিচরণক্ষেত্র। লাউয়াছড়া গ্যাস জরিপের নামে যা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা ও প্রমাণ আমাদের তাই জানান দেয় ও সতর্ক করে।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us