শরীরের প্রধান ফটক মুখ। বাড়ির ফটক নিরাপদ না থাকলে যেমন বাড়িটি ঝুঁকিতে পড়ে যায়, তেমনই মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রাখলে ঝুঁকিতে পড়তে পারে সারা শরীর। অনেকের ধারণা, মুখ পরিচ্ছন্ন না থাকলে শুধু মুখ আর দাঁতই রোগাক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু মুখের রোগ শুধু মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, রক্ত সঞ্চালনের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে যেতে পারে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে। আবার শারীরিক অনেক রোগের প্রাথমিক লক্ষণও প্রকাশ পায় মুখের ভেতর। মুখের স্বাস্থ্যবিধি ঠিকঠাক মেনে না চললে দাঁতে প্লাক থেকে দাঁত ক্ষয় ও মাড়ির রোগ হতে পারে। আর এ থেকে শরীরে দেখা দিতে পারে আরও কিছু সমস্যা। যেমন ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি এবং নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। দীর্ঘমেয়াদি মুখের রোগের সঙ্গে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসে রোগ, ক্যানসার, অপরিণত গর্ভপাত, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের জটিলতা বেড়ে যাওয়াসহ নানা জটিলতার যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
মুখ ও দাঁতের নানা রোগ যেমন দাঁত ক্ষয়, দাঁত শিরশির, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, নানা ধরনের ক্ষত বা ঘা, মুখে দুর্গন্ধ, আঁকাবাঁকা দাঁত, চোয়ালের হাড় ভাঙা, ক্যানসার, লালা গ্রন্থির সমস্যা, মুখের শুষ্কতা ও জ্বালাপোড়া, মুখ খুলতে কষ্ট প্রভৃতি সমস্যায় ভোগেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সচেতন হলে এসব সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।
করণীয়
- মুখ ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে পরিচ্ছন্নতাই জরুরি।
- দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করার কথা আমরা সবাই হয়তো জানি। তবে সকালে ঘুম থেকে জেগে দাঁত ব্রাশ না করে, নাশতা শেষ করে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। তাড়াহুড়ো না করে দুই মিনিট সময় নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করুন।
- অনেকে শক্তভাবে ব্রাশ করেন। এতে এনামেলের ক্ষতি হয়। রাতে খাবারের পর ব্রাশ করতে ভুলবেন না।ফ্লস (দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা বের করা) করার প্রচলন আমাদের দেশে কম। ফ্লস না করা মানে দাঁতের ৩০ ভাগ আপনি অপরিচ্ছন্ন রেখে দিচ্ছেন। কাজেই প্রতিদিন অন্তত একবার ফ্লস করুন।
- অনেকে দাঁতের ভেতর জমে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কারে দাঁত খিলান ব্যবহার করেন। এটি দাঁত ও মাড়ির জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। কাজেই দাঁত খিলান পরিহার করুন।
- মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে মুখে ক্ষতিকর জীবাণু থেকে রক্ষা পাবেন। মাউথওয়াশের বিকল্প হতে পারে কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণের মিশ্রণ।
- ধূমপান, পান–জর্দা, গুল, অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকতে হবে।
- মুখের বেশির ভাগ রোগে শুরুতেই তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই ছয় মাস পরপর দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে রোগের শুরুতেই ধরা পড়ে। চিকিৎসাব্যবস্থাও সহজ হয়, খরচও কমে।