লিভার সিরোসিস মারাত্মক এক ব্যাধি। এক্ষেত্রে লিভারের টিস্যুর স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফলে দাগ (ফাইব্রোসিস) পড়ে ও লিভারের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।
লিভার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা পুষ্টি প্রক্রিয়াকরণ করে। এছাড়া রক্ত সঞ্চালন থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোকে সরানো সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে শরীরের এই অঙ্গ।
যখন লিভারের টিস্যুতে দাগ পড়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন লিভার তার কার্যকারিতা হারায়। এ সময় শরীরে বিভিন্ন গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, যা অনেকেই অবহেলা করেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক লিভার সিরোসিসের গুরুতর ৫ লক্ষণ সম্পর্কে, যা অবহেলা করলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
জন্ডিস
নিউ দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিশাল গর্গ জানান, লিভার সিরোসিসের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া।
এটি জন্ডিসের লক্ষণ। অতিরিক্ত বিলিরুবিন (লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংসের ফলে একটি বর্জ্য পদার্থ) রক্তে জমা হয় ও লিভার যখন এটি প্রক্রিয়া করতে ব্যর্থ হয় তখনই হলুদ রঙের বিবর্ণতা তৈরি করে।
ক্লান্তি ও দুর্বলতা
লিভারের কার্যকারিতা অবনতির কারণে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিপাকীয় কাজগুলো সম্পাদন করা কঠিন হতে পারে। ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতাসহ সামগ্রিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
পেটে ফোলাভাব ও ব্যথা
ডা. গার্গের মতে, সিরোসিসের কারণে পেটে তরল জমা হয়। ফলে পেটে ফোলাভাব ও ব্যথা হতে পারে। অ্যাসাইটস এমন একটি অবস্থা, যার কারণে অন্যান্য অঙ্গে চাপ পড়ে ও ব্যথা হয়।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাত
লিভার সিরোসিসের কারণে অস্বাভাবিক শিরা নালি খুলে নিম্ন খাদ্যনালিতে, যা মলের মধ্যে রক্ত বা রক্ত বমি হতে পারে।
যকৃতের অবনতি হলে, কম রক্ত-জমাট বাঁধা প্রোটিন তৈরি হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সহজ করে তুলতে পারে।
মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি)
ডা. গার্গের মতে, যখন যকৃত সঠিকভাবে কাজ করে না তখন বিভ্রান্তি, ও স্মৃতির সমস্যার মতো মানসিক পরিবর্তন ঘটতে পারে।
মূলত টক্সিন (অ্যামোনিয়া, যা সাধারণত শরীর থেকে ফিল্টার করা হয়) রক্ত প্রবাহে জমা হওয়ার কারণেই মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে।
লিভার সিরোসিস একটি গুরুতর রোগ যা লিভার ব্যর্থতা, লিভার ক্যানসার এমনকি মৃত্যুর মতো জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই লিভারের এই কঠিন ব্যাধি নিয়ে সবারই সতর্ক থাকতে হবে।